"পঁচাত্তর ট্র্যাজেডি : রক্তরঞ্জিত শতপ্রবন্ধ" ফ্ল্যাপে লেখা কথা: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তর ট্র্যাজেডি : রক্তরঞ্জিত শতপ্রবন্ধ গ্রন্থটি আগস্ট ট্র্যাজেডি নিয়ে রচিত একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রবন্ধ-সংকলন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশ-বিদেশের প্রাবন্ধিকগণ অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। এই গ্রন্থে একশজন খ্যাতিমান লেখকের মূল্যায়নধর্মী ও স্মৃতিচারণমূলক লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পঁচাত্তর ট্র্যাজেডির নেপথ্যনায়ক, কারণ ও এর প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিভাবে পড়েছে এই গ্রন্থে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তারও কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বিবৃত হয়েছে। গ্রন্থটি এতটাই তথ্যবহুল যে, এখান থেকে অনেক নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাবে- যা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস উপলব্ধিতে সহায়ক হবে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত শুধু একজন ব্যক্তির মৃত্যুই নয়, একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নের মৃত্যুও বটে। এই গ্রন্থটি ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতির দলিল হিসেবেও পরিগণিত হওয়ার যােগ্য।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।