ওয়াজ এবং আওয়াজ এক না। এক করে ফেলা হচ্ছে। আওয়াজের নিচে ওয়াজ চিরেচেপ্টা। চলছে ‘যেমন খুশি সাজো’ স্টাইলে। বক্তা আর কমেডিয়ান প্রতিশব্দ হয়ে যাচ্ছে। ওয়াজের মজলিস হয়ে যাচ্ছে গানের আসরের মতো। অভিনয়ও চলছে সমানতালে। এমনটা আমরা চাইনি। জিনিস যত ভালো, নষ্ট হলে তত বেশি গন্ধ ছড়ায়। একড্রাম ঘিয়ের মাঝে একফোঁটা কেরোসিন পড়ে গেলে ড্রামের পুরো ঘি-ই নষ্ট হয়ে যায়। একপুকুর ভালোর মধ্যে একচিলতে কালোর মিশ্রণে পুকুরের সব পানি নাপাক হয় না; কিন্তু জেনেবুঝে সেই পানি কেনই-বা পান করতে হবে! বাংলাদেশে কত জন বক্তা আছেন আমরা জানি না। গোণায় ধরার মতো বক্তার সংখ্যা যদি হয় ৫ হাজার, ফাউল বক্তার সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হবে না। এই ১০০ জনের কারণে আমরা যেমন ৪ হাজার ৯০০ জনকে অপমান করব না, একইভাবে ১০০ হুতোম প্যাঁচার কারণে বাগান উজাড় হতেও দেবো না। ওয়াজের সেকাল-একাল এবং আগামীর আন্তঃপথে একটুকরো সাজেশন—বিরাট ওয়াজ মাহফিল। মানুষ ওয়াজ শুনতে চায়, আওয়াজ না। মানুষ ওয়াজ মাহফিলে এসে গান শুনতে চায় না; অভিনয় দেখতে চায় না; চায় না অনর্থক বিষয়ের সমালোচনা আর নিন্দামন্দ শুনতে। দীনি এই মাহফিলগুলো স্বরূপে ফিরে আসুক। এর জন্য উত্তরণের উপায় খোঁজা দরকার।
এই প্রজন্মের শক্তিমান লেখক রশীদ জামীল। যাঁকে তরুণ লেখকদের আইডলও বলা যায়। তরুণদের অনেকেই যাঁর লেখার স্টাইল ফলো করেন। রশীদ জামীল লেখালিখি করছেন ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। দেশবিদেশের পত্রিকা-জার্নালে লিখেছেন কয়েকশত প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কলাম। ঘুরেছেন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশ। কঠিন কথা সহজ ভাষায় লিখতে পারা কঠিন একটা কাজ। কিন্তু এই কঠিন কাজটা রশীদ জামীল সহজভাবে করে থাকেন। হুমুল্লাজিনা, ইলাইহিল ওয়াসিলা, জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান, আহাফি, মমাতি, কাচের দেয়াল, বিরাট ওয়াজ মাহফিল, পাগলের মাথা খারাপ, সেদিনও বসন্ত ছিল, মুমিনের নামাজ, সুখের মতো কান্না, একটি স্বপ্নভেজা সন্ধ্যাসহ পঞ্চাশের কাছাকাছি পাঠকপ্রিয় গ্রন্থের রচয়িতা এই লেখক ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ তরুণ কলামিস্ট হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। দীর্ঘ দুই দশক ধরে কাছে থেকে দেখা এই লেখকের একটা বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি যা ভাবেন এবং বিশ্বাস করেন, তা-ই অকপটে লিখে ফেলেন। এতে কেউ খুশি হয় কেউ করে গালিগালাজ। তখন তিনি তাঁর অন্যতম আরেকটা বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগান। সেটি হলো তিরষ্কার ও তোষামোদ দুটোকেই পাশ কাটিয়ে চলা।