পৃথিবীর ইতিহাসে নানা প্রকার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। যুদ্ধ যেমন মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করেছে তেমনি আবার অনেক সভ্যতাকে টিকিয়েও রেখেছে। আসলে যুদ্ধ খুব একটা ভালো কিছু না। আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই। কিন্তু কিছু কিছু যুদ্ধ যে অনিবার্য হয়ে ওঠে। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ নামক আমাদের এই রাষ্ট্র। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধে সবারই কমবেশি ভূমিকা ছিল। কেউ রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে, কেউ যোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে, কেউ বিভিন্ন গোপন তথ্য দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সেই সময়কালের কিশোর-কিশোরীদেরও অবদান কম ছিল না। তাদের সাহসিকতা, বুদ্ধি আর দেশপ্রেম প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ রকম অনেক কিশোর-কিশোরীর বীরত্বের গল্প আমরা শুনতে পাই। মনি হায়দারের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ তেমনি একটি কিশোর মুক্তিযুদ্ধের গল্পের বই। বইটির প্রকাশকাল ২০১৯ সাল। বইটিতে ১০টি গল্প সূচিবদ্ধ হয়েছে। উন্নতমানের কাগজ আর মজবুত বাঁধাইকৃত এ বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৮। সূচিবদ্ধ গল্পগুলো হলোÑএকটি লাল তারিখ, পতাকা, দোয়েল ও ঘণ্টির গল্প, আলতু এখনও দৌড়ুচ্ছে, তিনকন্যা, আনিস সাহেবের হাসি, রহস্যময় মানুষ, পরিরানি, কুশলের কান্না এবং পায়রা ও একটি জন্মদিনের গল্প। বইটি পড়তে গিয়ে মনে হবে এই গল্পগুলো কি আসলেই গল্প নাকি সত্য কাহিনি? আসলে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি পরিবারে একধরনের মানসিক যোগসূত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রত্যেকেই দেশের জন্য তাদের প্রাণ হাতে নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হতো না। গল্পগুলোর মাঝে উঠে এসেছে পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুরতার চিত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের নানা অজনা গল্প। তাদের বীরত্বপূর্ণ বিভিন্ন অভিযান আর আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নানা স্মৃতি ও তার নেতৃত্বের গৌরবোজ্জ্বল দিক। রয়েছে শেখ রাসেলকে নিয়ে গল্প। হৃদয়স্পর্শী ও বিস্ময়কর এই গল্পগুলো কিশোর পাঠ্য হলেও বড়দেরও সমান আকর্ষণ তৈরি করবে। মনি হায়দারের লেখার কৌশল ও উপস্থাপনা শৈল্পিক ও সাবলীল। পাঠককে গল্পের মধ্যে নিমগ্ন রাখতে যা যা দরকার তা তিনি সমভাবে দিয়েছিন এই গল্পগুলোর বর্ণে বর্ণে, বাক্যে বাক্যে। বইটি বিভিন্ন পাঠাগারে রাখা এবং উপহার হিসেবে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে।
জন্ম ১৯৬৮ সালে পহেলা মে [সার্টিফিকেট অনুসারে] বৃহত্তর বরিশালের পিরোজপুর জেলার ভানডারিয়া উপজেলার বোথলা গ্রামে, প্রমত্ত কচানদীর পারে। শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।