"কষ্টকথা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ধরা যাক, ‘না ধূলি, না বুলবুলি’ একটি উপন্যাস। প্রধান চরিত্র সাদিয়া মুবাররা। সে যখন ছােট, তার মা তাকে চাচির কাছে রেখে অফিসে চলে যেত। এখন সাদিয়া নিজে মা, মেয়েকে নানা-নানি, দাদা-দাদির কাছে রেখে অফিস করতে হয়। মিনিটে মিনিটে বাচ্চার জন্য মন কাঁদে। তার অসহায়ত্ব আর তার শিশুকালে মায়ের মনের অবস্থা এখন বােঝে। মা মুখ বুজে মন খারাপটা মেনে নিয়েছিল। ফেসবুককে কত গালাগালি করি, কিন্তু ফেসবুক আশ্রয়ও এখন। অক্ষর টিপে টিপে মন খারাপের কথাটা লেখা যায়। পােস্ট করার সাথে সাথে লাইক আসতে শুরু করে। লাইক দেয়া মানুষগুলাে সহমর্মি মনে হয়। ছয় বছর ধরে, ফেসবুকের হাত ধরে সাদিয়া একটু একটু নস্টালজিক হয়েছে। স্নেহ নামের ছেড়ে আসা বাড়ি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, আরাে আত্মীয়স্বজনের সাথে কাটানো দিনগুলাে, বন্ধুরা, ফেসবুকের পােস্টে নানা ভাবে এসেছে। সাদিয়ার মায়ামাখানাে দৃষ্টির কারণে, লেখার গুণে প্রােস্টগুলাে অনেকে পছন্দ করেছে। পালা-পার্বণ, সামাজিক কিছু সমস্যা বিষয়েও সে নিজস্ব মত তৈরি করতে চেয়েছে। সাদিয়া গুরুগম্ভীর সাজতে চায়নি। তার রুমমেটের’ কথা, প্রথম দেখা, সম্পর্ক তৈরি হওয়া, বিয়ে, দাম্পত্য জীবন। স্বামীর রুমমেট' নামকরণে এখনকার সাদিয়াদের প্রজন্ম চেনা যায়। কালের গর্ভে, ফেসবুকে সাদিয়ার পােস্টগুলাে হারিয়ে যাবে না, এই ভাবনা থেকে ‘না ধূলি, না বুলবুলি’। উপন্যাস ভাবলে উপন্যাস, গল্প ভাবলে গল্প, জার্নাল ভাবলে তাই। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়, এটা মস্ত গুণ। নিজেকে নিয়ে নিজে লেখায় সমস্যা হয় যে নিজের প্রতি নির্মোহ হওয়া যায় না। উপন্যাস লিখতে এ সীমানা ভাঙতে হবে। অবসর জীবন কাটাতে সাদিয়ার বাবা-মা ছেলের সংসারে সিলেট চলে যেতে চাইছে। সাদিয়ার মনে হয়, সে মেয়ে, অন্যের সংসারে থাকতে হয়, তাই ভাইয়ের মতাে জোর করে তার কাছে তাদের রাখতে পারছে না। ভাবনাটায় মনে হয়, সাদিয়া উপন্যাস লেখার কাজে প্রস্তুত হচ্ছে। তার হাত দিয়ে আগামীতে উপন্যাস বেরুবে। তখন সাদিয়াকে এই সম্ভাবনাও মাথায় আনতে হবে, বাচ্চার ভালাে দেখাশােনা হবে, তার এই সুবিধার কথা ভেবে বাবা-মাকে তার জীবনে আটকে রাখতে চাইছে না তাে!
Ashraf Al Deen-পশ্চিম আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ সিয়েরা লিয়ন এক দশক স্থায়ী গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত হয়। নিহত ও আহতদের বাদ দিয়েও সে দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোরের জীবন বিপর্যস্ত ও তছনছ হয়ে পড়ে। কারণ তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে চাইল্ড সোলজার বা শিশু সৈনিকে পরিণত হয়েছিল। অবুঝ নির্মমতায় তারা অত্যাচার চালিয়েছে অন্যদের ওপর, আবার নিজেরাও হয়েছে নিষ্ঠুরতার শিকার। যুদ্ধশেষে সকল প্রকার ফায়দা লুটেছে বড়রা। কেবল চাইল্ড সোলজাররাই ফিরে যেতে পারেনি জীবনের স্বাভাবিকতায়। ওরা বঞ্চিত হয়েছে নানাভাবে। সিয়েরা লিয়নের আইভান মাত্র দশ বছর বয়সেই যুদ্ধের আবর্তে জড়িয়ে পড়েছিল চাইল্ড সোলজার হিসেবে। সশস্ত্র যুদ্ধের সব ধরনের অমানবিকতা ও নৃশংসতার অভিজ্ঞতা অর্জন করে সে। অবশেষে বিশ বছর বয়সে যুদ্ধাহত হয়ে সে ছিটকে পড়ে জীবনের সব স্বস্তি থেকে। শেষ পর্যন্ত কী প্রতিদান পেল সে? এরই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আইভান রজার্সের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ দ্য চাইল্ড সোলজার। অনুবাদক আশরাফ আলী দীনের জন্ম চট্টগ্রামে, ২রা মে ১৯৫৪ সালে। তিনি মূলত কবি ও ছড়াকার। তার কাব্যগ্রন্থ নির্জন এসেছিল আজ প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে এবং রাত বাড়তে থাকে ১৯৯০-এ। পত্রপত্রিকায় তার বেশ কিছু গল্প ও অনুবাদ-সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গবেষণাকর্মেও সম্পৃক্ত। ভ্রমণ করেছেন ভারত, সৌদি আরব, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সিয়েরা লিন, সেনেগাল যুক্তরাজ্য। চাইল্ড সোলজারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের পাশাপাশি এ বিষয়ে নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে তার। এই গ্রন্থ রচনা সেই অভিজ্ঞতারই প্রত্যক্ষ ফসল।