কবিদের হাতে পড়ে ভ্রমণও রমণীয় হয়ে ওঠে, দৃশ্যগুলো হয়ে ওঠে আরও রঙিন, আর আনন্দ যেন আরও ছন্দিত রূপে দোলায়িত হতে থাকে অনুভূতির অন্দরে। কবি আশরাফ আল দীনের বেলায়ও এ কথা সর্বাংশে সত্যি। তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে এবং দেশে ফিরেছিলেন মার্চে। এর মধ্যেই যা দেখেছেন তাই পাঠকের জন্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আশরাফ আল দীনের ইতিহাস-ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলে বিখ্যাত ঘড়ি বিগ-বেন থেকে শুরু করে মহাপুরুষ অলিভার ক্রমওয়েল পর্যন্ত প্রায় সকল বিষয়েই। জাদুঘরের মতো দর্শনীয় বিষয়গুলোকে তিনি অনুপুঙ্খ বর্ণনায় তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে। তিনি শুধু সাদা চোখে দেখে যাননি, বরং আপন অনুভূতিকে প্রকাশ করেছেন অনেকটা আলাপচারিতার ভঙ্গিতে। আশরাফ আল দীনের লন্ডন ভ্রমণকালটি ছিল শীতকাল। তাই তুষারপাতের যে আনন্দময় চিত্র তার লেখায় ফুটে উঠেছে এক কথায় চমৎকার। সময়টা ছিল বিশ্ব জনমতের বিরুদ্ধে আমেরিকা কর্তৃক ইরাক আক্রমণের পূর্বকাল। অথচ অধিকাংশ ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধী। এমন সংঘাতপূর্ণ মতামতের পরিণতিকে কীভাবে সামাল দিল গণতন্ত্রের লালন-ভূমি ব্রিটেন? আমাদের কতটুকু ও কী কী শেখার আছে ওদের কাছে? নাগরিক নিরাপত্তা, অপরাধ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে ওদের অবস্থান কোথায়? অনুসন্ধানী লেখকের কথকতায় তা-ই বিভিন্ন প্রসঙ্গে নানা অনুসঙ্গ অনিবার্যভাবেই উঠে এসেছে। আশরাফ আল দীনের লেখা পড়ে স্পষ্টতই মনে হবে, বিদেশে গেলেই আমরা স্বদেশের ভালোবাসায় কাতর হয়ে পড়ি বেশি আর বাকি পৃথিবীর আয়নায় আড়ালহীনভাবেই দেখতে পাই আমাদের অবস্থান।
Ashraf Al Deen-পশ্চিম আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ সিয়েরা লিয়ন এক দশক স্থায়ী গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত হয়। নিহত ও আহতদের বাদ দিয়েও সে দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোরের জীবন বিপর্যস্ত ও তছনছ হয়ে পড়ে। কারণ তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে চাইল্ড সোলজার বা শিশু সৈনিকে পরিণত হয়েছিল। অবুঝ নির্মমতায় তারা অত্যাচার চালিয়েছে অন্যদের ওপর, আবার নিজেরাও হয়েছে নিষ্ঠুরতার শিকার। যুদ্ধশেষে সকল প্রকার ফায়দা লুটেছে বড়রা। কেবল চাইল্ড সোলজাররাই ফিরে যেতে পারেনি জীবনের স্বাভাবিকতায়। ওরা বঞ্চিত হয়েছে নানাভাবে। সিয়েরা লিয়নের আইভান মাত্র দশ বছর বয়সেই যুদ্ধের আবর্তে জড়িয়ে পড়েছিল চাইল্ড সোলজার হিসেবে। সশস্ত্র যুদ্ধের সব ধরনের অমানবিকতা ও নৃশংসতার অভিজ্ঞতা অর্জন করে সে। অবশেষে বিশ বছর বয়সে যুদ্ধাহত হয়ে সে ছিটকে পড়ে জীবনের সব স্বস্তি থেকে। শেষ পর্যন্ত কী প্রতিদান পেল সে? এরই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আইভান রজার্সের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ দ্য চাইল্ড সোলজার। অনুবাদক আশরাফ আলী দীনের জন্ম চট্টগ্রামে, ২রা মে ১৯৫৪ সালে। তিনি মূলত কবি ও ছড়াকার। তার কাব্যগ্রন্থ নির্জন এসেছিল আজ প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে এবং রাত বাড়তে থাকে ১৯৯০-এ। পত্রপত্রিকায় তার বেশ কিছু গল্প ও অনুবাদ-সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গবেষণাকর্মেও সম্পৃক্ত। ভ্রমণ করেছেন ভারত, সৌদি আরব, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সিয়েরা লিন, সেনেগাল যুক্তরাজ্য। চাইল্ড সোলজারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের পাশাপাশি এ বিষয়ে নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে তার। এই গ্রন্থ রচনা সেই অভিজ্ঞতারই প্রত্যক্ষ ফসল।