"একাত্তরের কিশোরী সূর্যসারথি" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া জীবনের আহ্বানে সাড়া দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা যাদের থাকে সায়মা তাদের একজন। ঢােলের তালে সে নাচতে নাচতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে, বাঁশির সুরে মােহিত হয়ে বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। চড়ইভাতি, পুতুল খেলা, ওপেনটি বায়স্কোপের সিঁড়ি ভেঙে নিজের ভবিষ্যৎকে দেখে নেয় প্লানচেটে। এহেন সায়মা হয়ে উঠল এক শক্তিশালী বইপাগল-তাই বেনগান, রবিনসন ক্রুশাে আর গালিভার তার বন্ধু হয়ে যায়। সুকুমার রায়- রবীন্দ্র-নজরুলের শিশুতােষগুলি তাকে উদ্দীপ্ত করে। বিশ্বসাহিত্যের বহুভূবনে তার ভ্রমণ সাঙ্গ হয়। আহত পাখির জন্যে বেদনাসিক্ত সায়মার মন একুশের জীবনদানে আর্ত হয়, ভাষা প্রেম তাকে নিয়ে যায় দেশপ্রেমের দিকে। চাচা-মামা বাবা-কাকাদের প্রগতিশীল চিন্তা তাকে শেখায় বিশ্বের গতি-প্রকৃতি – জানতে পারে সমাজ বিবর্তন। চার পা থেকে দুইপায়ে উত্তরণ যেমন মানব সমাজকে ঐতিহাসিক স্তরে উন্নীত করেছিল একুশের ইতিহাস আর উনসত্তরের গণ-অভুত্থানের ঘটনা তাকে তেমনি উন্নীত করেছিল রাজনৈতিক সচেতনতায়। কিশাের বয়সেই তাই মুক্তিসংগ্রামের জন্য তার ভেতরের তৃষ্ণা তৈরি হয়ে যায়। মহসিন সায়মার মনে দেয় আবির, চিত্তে দেয় চেতনা। সায়মা মজলুম জনমানুষের আর্থিক মুক্তি অর্জনের বাসনায় মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা দলকে সহায়তা করে এবং সুযােগ তৈরি করে ভারতে চলে যেতে সক্ষম হয়- ত্রিপুরার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে সে বুঝতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ যারা করছে তাদের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, তাদের সন্তান-সন্ততি আর ছাত্র-জনতা। আর তারা লড়াই করছে-পেটপুরে তিন বেলা ভাত খাবে, পড়াশুনা করবে, গান গাবে। এই ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-চেতনা। যুদ্ধ শেষে সায়মা জানতে পারে মহসিন সম্মুখ যুদ্ধে মারা গেছে- মুক্তিযুদ্ধের আনন্দে যুক্ত হয়ে যায় অশ্রুজল।