গত কয়েকবছরের পরিশ্রমের ফল এবং অনেকদিনের স্বপ্নের ফসল হিসেবে বাঙ্গালা গবেষণা থেকে প্রকাশ হয়েছে শতরূপা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই আমার এবং আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে আবেগ এবং চিন্তা তা এখানে কিছুটা ব্যক্ত হয়েছে। br শতরূপা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থে ৪টি বিভাগে ৩৭টি স্মৃতিচারণ, ১২টি প্রবন্ধ/নিবন্ধ, ৫টি অভিভাষণ এবং ২টি সাক্ষাৎকার সংকলিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম দিবসকে কেন্দ্র করে শতরূপা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশের তাৎপর্য কী?br এখানে বলা যেতে পারে, একশত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে এবং অধ্যয়ন করে তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশ গঠনে যারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং যারা লেখনীর মাধ্যমে গত একশত বছরে বা বর্তমানে এই বিশ^বিদ্যালয় সম্পর্কিত স্মৃতিচারণ করেছেন, চিন্তা প্রকাশ করেছেন কিংবা দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের রচনা বা মতামত এখানে গ্রন্থিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক সুনির্বাচিত বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক রচনা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এমনসব এলাকা আলোকিত করেছে বা এতদাঞ্চলের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রমবিকাশের একটি পর্যবেক্ষণ, একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য দলিল হিসেবে প্রকাশের আগেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে এমনসব মনীষী, চিন্তক, সাহিত্যিক, কবি, দার্শনিক এবং স্বক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত ও সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের রচনা সংকলিত হয়েছে যাদের চিন্তার এবং নৈপুণ্যের অবদান ব্যতীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বলতাকে পর্যবেক্ষণ করা যায়না। যদি অনূদিত হতো, তবে গ্রন্থটি এতদাঞ্চলের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রমবিকাশের দলিল হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হতো। এমনকি অনেক তরুণ কিন্তু মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাও এখানে এমনসব স্মৃতিচারণ করেছেন ও মতামত দিয়েছেন যা এ বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী যেকোনো ব্যক্তিকে আনন্দে-গর্বে প্লাবিত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। br বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি যাদের নিয়ে এবং যাদের দ্বারা এখানে আলোচিত হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক ডা. মাহাথির মোহাম্মদ, আইনস্টাইনের বন্ধু এবং বোসন কণার আবিষ্কারক সত্যেন বোস, বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অমর কব্ িজসীম উদ্ দীন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দাবাড়– কাজী মোতাহার হোসেন, বিশ^খ্যাত চিন্তাবিদ আব্দুর রাজ্জাক, কিংবদন্তি সাহিত্যিক ও রসায়নবিদ হুমায়ূন আহমেদ। এছাড়াও অনেক প্রখ্যাত শিল্পী-সমাজকর্মী-সংস্কৃতিকর্মীর লেখা রয়েছে এতে। কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে Į সরদার ফজলুল করিম, আবুল মাল আবদুল মুহিত, সন্জীদা খাতুন, বুদ্ধদেব বসু, শামসুর রাহমান, সন্জীদা খাতুন, সৈয়দ শামসুল হক, বদরুদ্দীন উমর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, হায়াৎ মামুদ, আবুল কাসেম ফজলুল হক, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, গোলাম মুরশিদ, আলী যাকের, নির্মলেন্দু গুণ, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আতাউর রহমান, সেলিম জাহান, মুনতাসীর মামুন, আলী যাকের, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শামীম আজাদ, আফরোজা পারভীন, অলোক বসু, চৌধুরী মুফাদ আহমদ প্রমুখ। br সরকার আমিন, সেলিনা আক্তার, ফাহিম হাসান শাহেদ, শরিফুল হাসান, আশান উজ জামান, আলমগীর শাহরিয়ার, মনির হোসেন, আদনান নাদীভ নয়ন, তুফফাতুল জান্নাত মারিয়া, মমতাজ মহল, ইয়াসমিন আক্তার, মহসীন আলম শুভ্র, তাহমিদ উল ইসলাম, শারফিন শাহ, সাইফুল ইসলাম জুয়েল, কামরূল হাসান মামুন, শান্তা তাওহিদা, তরিকুল ইসলাম, রায়ংান নূর এবং সঞ্জয় সরকার ― এইসব নতুন প্রজন্মের কয়েকজন মেধাবী ছাত্রছাত্রী-লেখকের রচনা সহ নবপ্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্রনেতা নূর হোসেন এবং সাদ্দাম হোসেনদের কথা (সাক্ষাৎকার) এই গ্রন্থে সংকলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপরে তারুণ্যের এবং সর্বাধুনিকতার আলোকছটা প্রতিফলিত হয়েছে। br ফলে অতীত এবং বর্তমানের চেতনাকে আত্তীকরণ করে যে শিক্ষা পীঠস্থানটি একদা তুমুল বিতর্কের মধ্যে দিয়ে 1921 সালে জন্ম নিয়েছিল তা তার নির্ধারিত ভূমিকায় ক্রমশ আগুয়ান হয়েছে ― শুধু যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান শক্তি জুগিয়েছে তা নয়, এতদাঞ্চলে বঞ্চিত-নিপীড়িত-সর্বহারা কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষদের আর্থিক কল্যাণ ও মুক্তির সাধনায় অনিবার্য বাংলাদেশের জন্মগ্রহণেও পালন করেছে অদ্বিতীয় ভূমিকা। বস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালি মুসলমানের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যে, সেই কাজটি এই বিদ্যায়তন খুব ভালভাবেই করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, এ বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার অন্যতম একটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চিন্তাসম্পদের নাড়ী হিসেবে স্পন্দিত হয়ে চলেছে। br এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি কাজ করতে বাকী আছে। তা হলো বাংলাদেশকে তথা এতদাঞ্চলের সাধারণ মানুষের আর্থিক মুক্তি অর্জনে সহায়তা করা। আশা করা যায় জ্ঞানের এই পীঠস্থান সে ভূমিকা সংগত কারণেই পালন করতে সক্ষম হবে। br এই লক্ষ্যে সংকলন গ্রন্থটি আমরা উৎসর্গ করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেইসব শিক্ষার্থীদের যারা ব্যক্তিমালিকানার পৃথিবীকে বদলে দিয়ে সামাজিক মালিকানার নতুন এক মানবিক জগৎ গড়ে তোলার সংগ্রামে লিপ্ত আছে। সম্পাদনা: আফজালুল বাসার ও শারফিন শাহ।
আফজালুল বাসার ২৪-০৭-১৯৫৭ তারিখে সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুস সােবহান এবং মাতার নাম মােসাম্মৎ রাহিলাতুন্নেসা। তিনি ১৯৮১ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন ইত্যাদি তাঁর গবেষণা ও লেখাপড়ার এলাকা। সাম্প্রতিক সাহিত্যতত্ত্ব চর্চায় তিনি একজন। অগ্রপথিক। তাঁর মৌলিক প্রবন্ধ গ্রন্থাবলি: বাঙলা সাহিত্য। সমালােচনা (১৯৯৩), অক্ষর পুরুষ (২০০২), বাঙালির স্বদেশ ও সংস্কৃতির অনুশিলন (২০০২), নজরুল ইসলামের সাহিত্য ভাবনা (২০০২), জহির রায়হান: এক বর্ণাঢ্য মুহূর্তের নায়ক (২০১২), বাঙালির অক্ষর, ভাব ও স্বভাব (২০১৩)। তাঁর সম্পাদিত পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থাবলি: অস্বীকার (৫টি সংখ্যা, ১৯৭৭-৭৯), আজমল স্মরণী (১৯৭৮), বিদায় স্মরণী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচ কোর্স পদ্ধতির ছাত্র ছাত্রীদের বিদায় স্মরণে, ১৯৮১), আহমদ শরীফ স্মারক গ্রন্থ (২০০১), অধ্যাপক আহমদ শরীফ শ্রদ্ধাঞ্জলি (২০০১), অধ্যাপক আহমদ শরীফ সাক্ষাৎকারে সমকাল (২০০২), স্বদেশচিন্তর মুখপত্র (২০০২), ট্রাকটেটাস ও ভিটগেনস্টাইনের ভাষাচিন্তা (২০০৩)। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ: কমিউনিজমের Gallo (Principles of Communism by f. Engels, 1986], নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবন, (Introducing Nazrul Islam by Serajul Islam Chowdhury : 1986, 2001], শিল্পকলা ও সমাজজীবন [Art and Social Life by G. V. Plekhanov, 1988, 2013], বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব। [Selected Essays on Mordern literary Theory by Western Writers : 1991, 2003], ভিটগেনষ্টাইনের ট্রাকটেটাস [Tractatus Logico-Philosophicus by L. Wittgenstein, 2001) কাব্যগ্রন্থ : নিম্নস্বরের কবিতা (২০১১), লিফট সিরিজ (২০১১), রঙিন পুতুল (২০১৩)। ছড়া ও গান : আহসানের ছড়া ও গান (২০১৩)।