সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, নিজের অপরাধ, উম্মাতে মুসলিমার অপরাধ ও বিশেষত মুহতারাম উলামায়ে কেরামের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। মহান আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের পবিত্র দরবারে করজোর নিবেদন, তিনি যেন আমাদের সকল অপরাধ মার্জনা করে ইসলামের সোনালী অতীতে ফিরে যাওয়ার সকল উপকরণ ও উপলক্ষ্য তৈরি করে দেন। বিশ্বখ্যাত দীনি ও ইলমি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানী হাফি. রচিত অনবদ্য গ্রন্থ; ‘উসুলুল ইফতা ওয়া আদাবুহু’-এর নির্বাচিত অংশ বাছায় ও অনুবাদ শেষে মুসলিম উম্মাহর সে সকল পাঠকের সামনে উপস্থাপন করছি, যারা শাখাগত বিষয়ে উলামায়ে কেরামে মতানৈক্য দেখে বিচলিত হন এবং স্বার্থান্বেষী জ্ঞানপাপী মহলের বাগাড়ম্বর ফাতাওয়ায় বিভ্রান্ত হয়েছন। গ্রন্থটিতে কেবল সেসব অধ্যায় সন্নিবেশিত করার প্রয়াস পেয়েছি, যেগুলো দীন পালনে আগ্রহী পাঠকের আন্তরিক অস্থিরতা দূরীকরণ, উদাসীন উলামায়ে কেরামের ফাতওয়া প্রদানে অগ্রগামীতা ও শাখাগত বিষয়ে বাড়াবাড়ির প্রবণতা দমনে সময়ের দাবি পূরণ করবে। মহান প্রতিপালকের দরবারে আশারাখি সর্বশ্রেণির পাঠকের জন্য মনযোগ সহকারে গ্রন্থটির অধ্যয়ন বর্তমান সময়ের অস্থিরতা দূরীকরণে ব্যাপক ও প্রভাব বিস্তারকারী ভূমিকা রাখবে। বান্দার অপূর্ণ যোগ্যতা কেবল চেষ্টাই করতে পারে, সফলতা আনতে পারে না। সকল প্রচেষ্টায় সফলতা দানের মালিক তো তিনিই। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি অধম বান্দাকে অন্তত প্রচেষ্টার তাওফিক দান করেছেন। সফলতা ও কবুলিয়াতও তারই কাছে কামনা করি। -ছানা উল্লাহ সিরাজী
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।