‘লাল মোরগ ফিরে এলো’ একটি গল্পের বই। নিশাত সুলতানার লেখা এ বইটি ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে। একটি গল্প নিয়েই ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি মুদ্রিত হয়েছে। রঙিন ছবি আর লেখায় সমৃদ্ধ একটি বই। শিশু-কিশোরদের হাতে বই দিতে অনেক অভিবাবক একটু দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব ভোগেন। কারণ বাচ্চারা খুব সহজেই বই ছিঁড়ে ফেলে বা নষ্ট করে ফেলে। এ বইটির কাগজ ও বাঁধাই খুবই মজবুত ফলে এ আশঙ্কা থেকে মুক্ত এ বইটি। একটি লাল মোরগ। মোরগ আমরা দেখিনি এমন মানুষ কমই আছে। শহরের বাচ্চারা অবশ্য সব সময় মোরগ-মুরগি দেখতে পায় না। কিন্তু মফস্বল কিংবা গ্রামে মোরগ-মুরগি খুবই সাধারণ বিষয়। প্রতিদিন সকালে মোরগের ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙে। এমনই পরিচিত একটি প্রাণীকে নিয়ে লেখা এই গল্পটি। গল্পটিকে অনেকটা প্রতীকী গল্পও বলা যায়। এটা পড়লেই ধরা যাবে এর আসল অর্থ। গ্রামের পাশের একটি জঙ্গলের মোরগ ভাবল যে শহরে অনেক আনন্দ আর আরাম। শহের যারা থাকে তারা কত বড় বড় দালানে থাকে। কত বড় তাদের রাস্তাঘাট। কত গাড়ি আর মানুষের বসবাস। শহর ছেড়ে গ্রামের জীবন যেন রংহীন এক সাদাকালো জীবন। হিজলতলি গ্রামের এই মোরগটি চায় শহরে গিয়ে শহুরে জীবন দেখতে। শহর থেকে আসা স্যাম নামের মোরগের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। স্যামের সাথে শহরে গেল লাল মোরগ। সেখানে গিয়ে দেখা শহরের মোরগেরা বাসাতেই টয়লেট করে। মোরগ গিয়ে দেখল একটি মুরগি মাত্র চারটি ডিমে তা দিচ্ছে। এ দেখে মোরগ খুব অবাক হলো। কারণ গ্রামের জঙ্গলে কম করে হলেও সাতটি ডিমে তা দেয় মুরগিরা। মোরগ এই ঘটনার কথা জানতে চাইল। তখন মুরগি কেঁদে কেঁদে বলল, মালিক তার অন্য ডিমগুলো নিয়ে গেছে! এ ছাড়া শহরের মোরগদের বাসি নোংরা খাবার খেতে হয়। অথচ জঙ্গলে কত টাটকা খাবার তারা খেতে পারে। স্যামের সাথে যে রঙিন স্নানগøাস পরে শহরে গিয়েছিল সে সেই স্নানগøাস মাথায় তুলে আবার তার জঙ্গলের আস্তানায় ফিরে আসে। এভাবেই তার শহর ভ্রমণের ইতি ঘটে। আসলে যে যে পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত তাকে সে পরিবেশেই থাকতে হয়। না হলে অন্য পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়।
নিশাত সুলতানা একজন বাংলাদেশী কলামিষ্ট, শিশুসাহিত্যিক ও মানবাধিকার কর্মী। কর্মজীবনে ’নিশাত সুলতানা’ নামে পরিচিত হলেও বাবা-মা, নিকটজন ও বন্ধুবান্ধবরা ’পূরবী’ নামেই ডাকেন। জন্ম উত্তরবঙ্গের নওগাঁ জেলায়। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নওগাঁ জেলা শহরে। পড়েছেন নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁ সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। বাবা এ,কে,এম, নূরুজ্জামান এবং মা সেলিমা বানুর দ্বিতীয় সন্তান তিনি। যদিও কর্মজীবনের শুরু ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে, পরবর্তীতে যুক্ত হন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে। তিনি কাজ করেছেন কনসার্ন ইউনিভার্সেল, সেভ দ্য চিলড্রেনের মত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে। বর্তমানে কর্মরত আছেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে। সাতাশতম বিসিএসে যোগদান করে তিনি সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কিছুদিন দায়িত্বও পালন করেন। শিশুদের জন্য অদ্ভূত সুন্দর একটা পৃথিবী নির্মাণ করতে চান তিনি। তাঁর রচিত শিশুতোষ বইগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ’নিপুর রঙিন একদিন’ ,’পুটুর বদলে যাওয়া’ ও ’কাক ও বকের একদিন’। পাঠক নন্দিত লেখিকা নিশাত সুলতানা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত।