বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা চলা কালে যখন দেশের অর্থনীতি নিয়ে সকল মহলে আশঙ্কা বিরাজ করছিলো সে সময়ই বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ম গভর্নরের চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব নিয়েছিলেন ড. আতিউর রহমান। সফলও হয়েছেন। কেবল আর্থিক মন্দা মোকাবিলা করেছেন তাই নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ গতির মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল করেছেন উদ্ভাবনী উন্নয়নমুখী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং সারা বিশ্বের ব্যাংকিংয়ের ধ্যান-ধারণাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পেরেছেন। সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে এক দিকে যেমন তাদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করতে কাজ করেছেন, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতিকেও করেছেন আগের চেয়ে শক্তিশালি। এই বইয়ে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার শেষ দুই বছরে ড. আতিউর রহমানের দেয়া বিভিন্ন বক্তৃতাগুলো সঙ্কলিত হয়েছে। ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে আন্দোলনে তিনি দেশের ব্যাংকিং খাতকে যুক্ত করেছিলেন তারই প্রতিফলন পাওয়া যাবে এ বক্তৃতাগুলোতে। প্রসঙ্গতই এসেছে ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, কৃষি খাতে বিনিয়োগ, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণ, সবুজ অর্থনীতি এবং সর্বোপরি ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা সহজলভ্য ও নিরাপদ করার মতো বিষয়গুলো। অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশের সামষ্টিক লক্ষ্য অর্জনের পথে এখনও রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশ অন্তপ্রাণ অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন চিন্তক আতিউর রহমানের প্রাসঙ্গিক বক্তৃতাগুলোর এ সঙ্কলন এসব চ্যালেঞ্জ মোকবিলায় দিক নির্দেশনা দিতে পারে। বিশেষ করে দেশের ভবিষ্যৎ যে তরুণ সমাজ, তারা এ সঙ্কলনটি পাঠ করে সামান্য উদ্বুদ্ধ হলেও এ উদ্যোগ শতভাগ সফল হবে।
Atiur Rahman- রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন : আর্থ-সামাজিক পটভূমি’; মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই :‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ’; ‘অসহযোগের দিনগুলি’,রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা;’ ‘উন্নয়ন আলাপ;’ ‘জনগণের বাজেট;’ ‘আলো আঁধারের বাংলাদেশ;’ ‘সুশাসনের সন্ধানে;’ ‘ অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন;’ ‘উন্নয়ন কার জন্য;’ ‘অপউন্নয়ন;’ ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা;’ `Peasants and classes;’ `Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।