"রাজাকারের কর্মকাণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায় চার দশকের তথ্যানুসন্ধান ও গবেষণার সূত্রে তাজুল মােহাম্মদ ঘুরেছেন জনপদ থেকে জনপদে, আহরণ করেছেন মাঠ পর্যায়ের তথ্য, দীর্ঘ দিনের একনিষ্ঠ ইতিহাস-চর্চায় তিনি নিজেকে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন গােটা দেশের বাস্তবতার ছবি তার চিত্তপটে যেমনভাবে উদ্ভাসিত হয়, তেমন আর কারাে ক্ষেত্রে বলা যাবে না। একাত্তরে পাকবাহিনীর সহযােগী-গােষ্ঠী, যারা বহু নির্মমতা ও নৃশংসতার জন্য দায়ী, রাজাকার অভিধায় সাধারণভাবে পরিচিত, তাদের দেশব্যাপী কর্মকাণ্ডের খোজ তাজুল মােহাম্মদের মতাে করে আর কেউ রাখেন না। ফলে তাজুল মােহাম্মদের রাজাকারের কর্মকাণ্ড গ্রন্থ কোনাে অঞ্চল বা কতক ঘটনার বিবরণ কেবল নয়, একাত্তরে নয় মাস জুড়ে সারা দেশে যেসব নৃশংসতা ঘটিয়েছে পাকবাহিনীর সহযােগীরা তার সুনির্বাচিত ভাষ্য এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য গবেষক স্বয়ং জেনেছেন প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা শহীদের নিকটজনের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ফলে ইতিহাসের ঘটনা শুধু নয়, ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়েছে এই গ্রন্থ, সেইসাথে নিছক বর্ণনা নয়, হয়েছে মানবতার দলিল।
তাজুল মােহাম্মদ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭২ সালে। আর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে হাত দেন ১৯৭০ সালে। তখন থেকেই লেখালেখি করছেন এ বিষয় নিয়ে। ১৯৮৯ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় “সিলেটে গণহত্যা'। এ গ্রন্থের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি। সিলেটের যুদ্ধ কথা’-সহ আরও চার-পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল অবধি। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে ব্যাপক আলােচনার কারণেই হয়তাে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ব্রিটেনের টুয়েন্টি টুয়েন্টি টেলিভিশনের। যােগাযােগ করে সে টিভি কর্তৃপক্ষ। নিয়ােগ করে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ৯ মাসের গবেষণার ফল হিসেবে নির্মিত হয় ‘দা ওয়ার ক্রাইম ফাইল’ নামক প্রামাণ্য চিত্র। যা সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বের দেশে-দেশে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে, ব্রিটেনে, যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেই তাজুল মােহাম্মদের ওপর হুমকি আসে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়েত শিবিরের পক্ষ থেকে। এক সময় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। দেশের বাইরে থেকেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বসতি গড়েছেন কানাডায়। বছরে কয়েক মাস দেশে অবস্থান করে চালান গবেষণাকর্ম। বাকি সময় কানাডায় বসে লেখালেখি করেন। গ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে ষাটের অধিক। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকের ন্যায়। তাজুল মােহাম্মদের জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। পরে থিতু হয়েছিলেন সিলেট শহরে।