"একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : রক্তেভেজা মাটির সাক্ষ্য" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ একাত্তরে বাঙালি জাতিকে চিরতরে পদানত করতে নিষ্ঠুর হত্যালীলায় মেতেছিল পাকবাহিনী। দেশজুড়ে চলেছিল তাদের মারণ-যজ্ঞ, বহু জনপদ হয়েছিল যথেচ্ছ সামরিক আক্রমণের লক্ষ্য, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ কত-না সাধারণ মানুষ হয়েছিল নিষ্ঠুর আক্রমণের শিকার। বাংলার মাটি লাল হয়েছিল যে অগণিত শহীদের বুকের রক্তে, তাদের বড় অপরাধ ছিল তারা বাঙালি। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা, সেই রক্তরেখা ধুয়ে-মুছে গেছে কত আগে, কিন্তু বাংলার মাটি তাে এইসব ঘটনার সাক্ষ্য আজো ধারণ করে আছে বুকে। সেই সাক্ষ্য শােনার জন্য চাই সংবেদনশীল সাধনা, সকলের হয়ে নিষ্ঠুরতার সমুদয় পরিচয় উদঘাটনের যে কাজ করে চলেছেন তাজুল মােহাম্মদ, একাদিক্রমে একাগ্রভাবে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের নানা প্রান্ত তিনি ঘুরে ফিরছেন, সন্ধান করছেন ইতিহাসের তথ্য, সচেষ্ট হয়েছেন রক্তেভেজা মাটির ভাষ্য আহরণে। তারই ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি বর্তমান গ্রন্থ, বহু পরিশ্রমে অশেষ যত্নে প্রণীত। কত মানুষের কত অজানা কথা তিনি শুনেছেন এবং শুনিয়ে চলেছেন সবাইকে, বিশেষভাবে নতুন প্রজন্মের সদস্যদের। এই গ্রন্থ তাই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সাক্ষ্য, ইতিহাসের দলিল, অমােঘ সত্যের উদ্ভাসন।
Title
একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : রক্তেভেজা মাটির সাক্ষ্য
তাজুল মােহাম্মদ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭২ সালে। আর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে হাত দেন ১৯৭০ সালে। তখন থেকেই লেখালেখি করছেন এ বিষয় নিয়ে। ১৯৮৯ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় “সিলেটে গণহত্যা'। এ গ্রন্থের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি। সিলেটের যুদ্ধ কথা’-সহ আরও চার-পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল অবধি। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে ব্যাপক আলােচনার কারণেই হয়তাে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ব্রিটেনের টুয়েন্টি টুয়েন্টি টেলিভিশনের। যােগাযােগ করে সে টিভি কর্তৃপক্ষ। নিয়ােগ করে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ৯ মাসের গবেষণার ফল হিসেবে নির্মিত হয় ‘দা ওয়ার ক্রাইম ফাইল’ নামক প্রামাণ্য চিত্র। যা সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বের দেশে-দেশে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে, ব্রিটেনে, যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেই তাজুল মােহাম্মদের ওপর হুমকি আসে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়েত শিবিরের পক্ষ থেকে। এক সময় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। দেশের বাইরে থেকেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বসতি গড়েছেন কানাডায়। বছরে কয়েক মাস দেশে অবস্থান করে চালান গবেষণাকর্ম। বাকি সময় কানাডায় বসে লেখালেখি করেন। গ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে ষাটের অধিক। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকের ন্যায়। তাজুল মােহাম্মদের জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। পরে থিতু হয়েছিলেন সিলেট শহরে।