আপনাকে এত দুখী দেখাচ্ছে কেন? আপনার জীবনে বিষাদের কারণ কী? আপনি কি সত্যিকার অর্থে বেঁচে আছেন নাকি কেবল জীবনের গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছেন? চারপাশের অনেক মানুষকে হয়তো হাসতে দেখেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখেন কিন্তু তার মানে কি তার কোনো দুঃখ-কষ্ট বা আক্ষেপ নেই? দেখুন! পৃথিবীর সকলেই যদি একে একে নিজের সমস্যাগুলো প্রকাশ করা শুরু করত, তবে সকলের দুঃখ-কষ্ট আর হতাশা পৃথিবীকে ছেয়ে ফেলত। এবার আপনিই বলুন—এমন সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে তখন মানবসভ্যতা টিকে থাকতে পারত? আমাদের জীবনযাত্রাও কী স্বাভাবিক থাকত? কেমন হতো যদি সবাই আয়নায় নিজ প্রতিবিম্ব দেখার মতো করে নিজের অন্তর দেখতে পারত? আর সেখানে যদি সূচনালগ্ন থেকে মানুষ যত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে এসেছে, সেসব দেখতে পারত? জীবনের যে অল্প সময় আপনি অতিবাহিত করে এসেছেন, তার দিকে দৃষ্টিপাত করুন। এবার যেসময়টুকু কষ্টে পার করেছেন তার সাথে যেটুকু সময় আনন্দে পার করেছেন, তার তুলনা করুন। আপনাকে যা করতে হবে—প্রথমে হৃদয়ে পুঞ্জীভূত দুঃখ-কষ্টে আর হতাশা থেকে মুক্তি পেতে হবে। এসব দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিন এবং সুখে থাকার নতুন উপায় খুঁজে বের করুন। বিপর্যয়, হতাশা ও সংশয়ের মাঝেও সন্তুষ্ট থাকার ক্ষমতা আপনার মনোবলকে দৃঢ় করে তুলবে। কিন্তু এই অন্তর্নিহিত সুখটুকু আসবে কোথায় থেকে? আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আপনার দুঃখ-কষ্টকে আপনার সুখের প্রতিবিম্ব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। বিষাদের মাধ্যমেই আমরা আনন্দের মর্ম উপলব্ধি করতে পারি ঠিক যেভাবে প্রখর রৌদ্রতাপের কারণে শীতল হাওয়ার মর্ম বুঝতে পারি। মানুষ মনে করে, সে যা চায় তা-ই সে করতে পারে। সে একজন নিখুঁত মানুষ। মানুষ কখনো নিজেকে অবমূল্যায়ন করে ফেলে, আবার কখনো নিজের অতিমূল্যায়ন করে বসে। খুব কমক্ষেত্রেই তারা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারে। অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞতার সূত্রপাত। অথচ কতবার আমরা আমাদের ভুলগুলো থেকে পালিয়ে বেড়াই যেখানে এগুলোই মূলত বিজ্ঞতার চারাগাছ? জীবনের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহের সাথে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হওয়া শিখুন। সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে এবং তিনি আমাদের কাছে অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিকূলের কাছে কী চান... তা জানতে শিখুন। ভুল থেকে পালিয়ে বেড়াতে থাকলে এগুলো আরও নতুন ভুলের দিকে আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে। নিজের আত্মাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিন। নিশ্চয়ই তিনি অব্যর্থ, তিনি সর্বজ্ঞ। এরপরই আপনি নিজেকে জানতে পারবেন এবং বেড়ে ওঠা শুরু করবেন। যা ঘটে গেছে তার জন্য যদি আপনি নিজেকে দোষারোপ করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন, তাহলে আপনি আসলেই নিজের নিয়তিকে অস্বীকার করার মতো বোকামি করছেন। আর পরোক্ষভাবে স্রষ্টাকে দায়ি করার মতো জঘন্য অপরাধ করছেন। আপনিই বলুন! স্রষ্টার নগন্য সৃষ্টি হয়ে কী আমরা কখনো তার অসীম বিজ্ঞতাকে উপলব্ধি করতে পারি?