‘শৈশব-কৈশোরে আমি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল ছিলাম। খেলাধুলা করার মতো শক্তিও ছিল না। ফলে লেখালেখিতে সময় দেয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না। আমার দাদাসহ প্রতিবেশি বয়োবৃদ্ধরা প্রায়ই প্রাচীন লোকগাঁথা পাঠ করতেন। সেখানে আমার সমবয়সী কেউ থাকত না; কিন্তু আমি নিয়মিতই উপস্থিত থাকতাম। ওইসব শুনে ধীরে ধীরে কবিতার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলাম। অবশ্য কেন হলাম তা জানি না। শুধু জানতাম, কবিতার টুপটাপ ধ্বনি আমাকে বিমোহিত করে। ভাবতাম, কবি মানেই একটি রহস্যজনক চরিত্র। যার হরেকরকম মানবীয় গুণ ও শক্তি আছে। ... শৈশব-কৈশোরে লেখালেখি আমার ছেলেবেলার খেলাধুলা হয়ে গেল। তারপর কবিতাই হয়ে উঠলো আমার যুদ্ধক্ষেত্র, ভাষা হাতিয়ার। আমার বয়স যখন ১২। তখন আমাকে ক্লাসের ভালো ছাত্র হওয়ায় ইসরাইলের বিজয় দিবস উপলক্ষে কিছু আবৃত্তি করতে বলা হয়। আমি স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করলাম। পরের দিন সেখানকার সামরিক গভর্নর আমাকে তলব করেন এবং এমন কবিতা লেখা ও আবৃত্তি করার জন্য ধমকা-ধমকি করেন। যতদূর মনে পড়ে, কবিতায় যা লিখেছিলাম তা সত্য ভেবেই লিখেছিলাম। এতটাই অবুঝ ছিলাম যে, কি বলতে হবে তা বুঝতে পারিনি। তখন ভেবে খুব অবাক হলাম, সামান্য একটি কবিতাকে এত ভয় পায় বিরাট এই ইসরাইল! বুঝতে পারলাম, কবিতা কত প্রভাবশালী একটি কর্ম।’ মাহমুদ দারবিশ
মাহমুদ দারবিশ (১৯৪১-২০০৮) ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি। তাঁর জন্ম ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ ফিলিস্তিনের গালিলি প্রদেশের আল-বিরওয়া গ্রামে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময় ইজরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের গ্রাম দখল করে নেয়। সেই সময় তিনি সপরিবারে পালিয়ে যান লেবাননে। তখন তাঁর বয়স মাত্র সাত। সেই যে উদ্বাস্তু জীবনের শুরু, এরপর মাঝে-মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য দেশে ফিরে এসেছেন, কিন্তু প্রায় সারা জীবনই দেশছাড়া থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। . আজীবন কবি স্বপ্ন দেখেছেন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের। সাহিত্য জগতে মাহমুদ দারবিশকে আরব বিশ্বের কণ্ঠস্বর বলা হয়। তাঁর কবিতাই আরবদের দেশপ্রেম ও সংগ্রামের ভাষা হয়ে ওঠে। কবিতাই ছিল কবির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, তাঁর প্রতিবাদের অস্ত্র, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর সাহিত্য, বিশেষত তাঁর কবিতা প্যালেস্টাইনের জনগণের মাঝে ফিলিস্তিনি পরিচয়ের শক্তিশালী অনুভূতি তৈরি করেছিল, যা তাঁদের মাতৃভূমির দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এখনো সহযোগিতা করছে। দারবিশ বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর কবিতায়, হাজারও বিপ্লবী ফিলিস্তিনির অনুপ্রেরণা হয়ে। .