মানুষের চোখের দিকে তাকালে বােঝা যায় তার ভেতরে কত গল্প জমে আছে। যেন নিঃশব্দে ঝংকারিত হাজারাে সুর সঙ্গীতায়িত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গল্পগুলাে বলার অপেক্ষায়, সুরগুলাে শােনার অপেক্ষায়। সবাই গল্পগুলাে বলতে পারেন না, সুরগুলাে শােনাতে পারেন না। তবে তারা চান বলতে, চান শোন।
তে। একজন গল্পকারের নৈপুণ্য এখানেই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে গল্পগুলাে খুঁজে পেতে হয় উৎস থেকে একটি বীজ আহরণ করে অঙ্কুরিত করাতে হয়। ডালপালা মেলে দিয়ে ফুল ফোটাতে হয়। আবার সেই ফুলকে মাঝে-মাঝে ঝরিয়েও দিতে হয়। গল্প লেখা এমনই এক যাত্রা। মনস্তাত্ত্বিক এক যাত্রা যা অন্তরের অনেক গভীর থেকে সঞ্চারিত হয়। গল্পকার তার প্রতি গল্পেই এমন এক যাত্রায় মগ্ন থাকেন প্রায়ই যাত্রাভঙ্গ হয়, আবার নতুন যাত্রা শুরু হয়। ছােটগল্প নিয়ে আমার এক ধরনের মােচছন্নতা আছে। ছােটগল্প কত ছােট হবে, কতটা বড় হবে, রাবীন্দ্রিক, চেখভীয় বা অন্য কোনাে সংজ্ঞার বাইরে গল্প লেখা যায় কিনা-এসব আমায় প্রতিনিয়ত ভাবায়। কিছু ভাবনার শেষ আছে, কিছু আবার উত্তরহীন রয়ে যায়। প্রচলিত সংজ্ঞা ভাঙার ইচ্ছে আমার মাঝে প্রবল, তাই কেমন করে সংজ্ঞা ভেঙে ছােটগল্প লিখলে পাঠক মেনে নেবেন তার সন্ধানেই সময় যায়। সে কারণে আমার লেখা গল্পগুলাে এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়ে গেছে, হয়তাে ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে। তবে পরীক্ষাধর্মী গল্প লিখে 'ভালাে অভিজ্ঞতা হয়েছে। আরেকটি বিষয় নিয়ে বেশ ভেবেছি। গল্প পাঠকের কাছে গ্রহণযােগ্য এবং পঠনপ্রয় হবে কেমন করে? মনে হয়েছে গল্পের মধ্যে সংঘাতই হচ্ছে সেই সূত্র, যা সেটিকে বেশি পাঠযােগ্য করে তােলে। এই গ্রন্থে যেমন আছে খুব সাধারণ দৈনন্দিন প্রেমের গল্প, তেমনি জটিল চিন্তাও স্থান পেয়েছে। রৈখিক, অরৈখিকদুরকমই আছে। দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, সম্পর্ক, আধুনিকতার অগভীরতা,-এর সবই এই মলাটে বন্দি হয়েছে।