লেখকের কিছু কথা মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনে সবচেয়ে বড় ট্রাজিক মহাকাব্য। এটি অনুষ্ঠিত করতে সমগ্র বাঙালি জাতির বহুমুখী অবদান আছে। মাঠে অস্ত্র নিয়ে যেমন গেরিলা বা সম্মুখ লড়াই ছিল তেমনি প্রয়ােজন ছিল সেটি পরিচালনায় নানা ধরনের কাজের। এ যুদ্ধে বহুমাত্রিক কাজ ছিল। যেমন মুক্তিপাগল বাঙালির লড়াই ছিল তেমনি ছিল স্বাধীনতা বিরােধী পক্ষের নানামুখী নির্যাতন। নির্যাতনের ধরনও ছিল নানা মাত্রিক ও অবর্ণনীয়। বিশেষত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারী ও সংখ্যালঘুরা ছিল পাকিস্তানিদের প্রধান টার্গেট। পাকিস্তানিদের গণহত্যা আর নির্যাতনের ভয়ে প্রায় শতভাগ হিন্দু নরনারী গৃহত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। যাদের বড় অংশই ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যাঁরা মাটির মায়া ত্যাগ করে দেশত্যাগ করেননি তারা লুকোচুরি করে মাটি আঁকড়ে পড়ে ছিলেন নিজের ভিটায়। তাঁদের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর কড়া নজর ও ক্ষোভ ছিল। যেহেতু ভারত বা হিন্দুস্থান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযােগিতা করছে, আমাদের বিপদগ্রস্থ শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে সেহেতু পাকিস্তানিদের প্রবল আক্রোশ ছিলাে হিন্দুদের উপর। আর স্থানীয় দালালদের নজর ছিল সংখ্যালঘুর সম্পদ ও নারীদের উপর। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর পরই যে সময়কার পত্র-পত্রিকাগুলাের সংবাদ বা নিবন্ধ গুলাে পড়লে বােঝা যায় নির্যাতনের মাত্রা ও পরিধি কী পরিমাণ ছিল। এতদ্ববিষয়ে তৎকালিন সময়ের কিছু পত্র-পত্রিকায় পরিবেশিত খবর সংযুক্ত করা হয়েছে। হিন্দুদের সম্পদ দখলের কিছু আবেদনপত্রের ছায়াকপি যুক্ত করা হয়েছে। এ জাতীয় কাজ একটি মাত্র পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়ােজন পড়বে হাজার হাজার পুস্তকের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলা বা শােনা যত সহজ ততটাই কঠিন সেটি লিখে গ্রন্থিত করা। লেখার কাজটি সহজ নয়। যখন সেটি গণহত্যা সম্পর্কিত হয়। বিশেষত নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সংঘটিত গণহত্যা ও অত্যাচার সম্পকিত হলে সেটি মহাকঠিন।