এক সময়ের ‘কথা বলা জাদুর বাক্স’ টেলিভিশনের অবস্থান এখন কোথায়, তা নিশ্চয়ই কমবেশি সবাই বোঝেন। তথ্য, বিনোদন, জ্ঞান আহরণ কিংবা সাধারণ কিছু সম্পর্কে কেবল ধারণা পেতে মানুষ এখন রীতিমতো টেলিভিশন আশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। জীবনযাপনের সাথে এখন টেলিভিশন এমনভাবে মিশে গেছে, যা থেকে মানুষকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। টেলিভিশন সাংবাদিকতার জগতে একজন নতুনের প্রবেশ দরজা হিসেবে কাজ করবে বইটি। গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষকদের কাজে সহায়ক হবে; কৌতূহল মেটাবে অনেক সাধারণ পাঠকেরও। টেলিভিশন সাংবাদিকতা পরিণত হয়েছে মোহনীয় বা মায়াময় (গ্ল্যামার) পেশায়। ফলে অনেক মানুষ এই জগতে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং পেশাটি হয়ে উঠছে তুলনামূলক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। শুধু একাডেমিক জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ সফলভাবে এক্ষেত্রে কাজ করতে পারছে। পাশাপাশি কঠোর শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অভিজ্ঞতাও এই পেশায় কাজে লাগছে। এই দক্ষতা ও জ্ঞান অবশ্যই মনোস্তাত্ত্বিকভাবে শিক্ষণের বিষয়। টেলিভিশন অনুষ্ঠান তৈরির একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া হচ্ছে টেলিভিশন সাংবাদিকতা। এই সাংবাদিকতার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কিছু উপাদান বা উপকরণের সংগ্রহ যা একসঙ্গে কাজ করে। কাজভেদে এই উপকরণগুলো একটি অন্যটির ওপর নির্ভরশীল। একক কোনো উপকরণ দিয়ে এই পেশায় কাজ করা যায় না। টেলিভিশন ব্যবস্থা যন্ত্রপাতি ও মানুষ যারা নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য পরিচালিত হয়। প্রতিবেদন লিখন থেকে শুরু করে, প্রযোজনা, সম্পাদনা, ক্যামেরা চিত্র, চলমান চিত্র, এনিমেশন, রঙ, শব্দ, শব্দ-মিশ্রণশৈলী, উপস্থাপনশৈলী সব মিলিয়ে টেলিভিশন সাংবাদিকতা। টেলিভিশন সাংবাদিকতা প্রক্রিয়ার এই যাবতীয় টেকনিক ও টেকনোলজি নিয়ে রচিত বর্তমান গ্রন্থ।
লেখক পরিচিতি ড. মুসতাক আহমেদ দশ বছরের অধিক কাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র জেলা জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বিহারপুর গ্রামের আজিম উদ্দিন আহমেদ ও আকতার হাসনা হেনা আহমেদ ছোট ছেলে। জন্ম ১৯৭৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বাবা আক্কেলপুর এফ. ইউ. পাইলট স্কুলের ‘আজিম স্যার’ পরিচিত মানুষটির হাত ধরে স্কুলে যাওয়া, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিসরে। ছাত্রাবস্থায় বিজয়ের আলো নামে একটি ছোটকাগজ সম্পাদনা করেছেন। গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও নীতি সংক্রান্ত কাভারেজের ওপর পি-এইচ. ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শিক্ষকতা জীবনে দেশ-বিদেশর বিভিন্ন জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন কুড়িটির বেশি। মিডিয়া বিষয়ক বেশ কিছু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে গণমাধ্যম-নৈতিকতা-আইন-জবাবদিহিতা, গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতি: নয়া তথ্যযুগে পুঁজিবাদ আর গণতন্ত্র, কর্পোরেট মিডিয়ার সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ: আধিপত্যের লোকপরিসর মিডিয়াকোষ, এবং মিডিয়া ও ডিসকোর্স বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। টেলিভিশন সাংবাদিকতা তার বর্তমান আগ্রহের ক্ষেত্র।
শামীম আল আমিন সাংবাদিক ও লেখক। সংবাদ সংগ্রহের জন্য বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে তা তুলে ধরেন পাঠকের কাছে। কিন্তু সাহিত্য রচনায় তিনি বাস্তব, পরাবাস্তব এবং কল্পণার অদ্ভূত এক মিশ্রণ ঘটান। মূলত: লেখেন গল্প, উপন্যাস ও ভ্রমণ। শিশুদের জন্যে অনেকগুলো বই রয়েছে তার। সাংবাদিকতা ও বিতর্কের কলাকৌশলের উপর লেখা তার বইগুলোও হয়েছে অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়। তবে এবার ইতিহাস নির্ভর কিছু বই লেখার প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী বন্ধু সক্রিয়ভাবে পাশে থেকেছেন, নানাভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন; কাজ করছেন তাদেরকে নিয়ে। এ জন্যে তিনি নিউইয়র্কে গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম’ নামে একটি সংগঠন। যার অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অসামাণ্য উদ্যোগ ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ, গবেষণা এবং স্মৃতি স্মারক সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের নির্ভুল এবং সচল ইতিহাস তুলে আনতে চান তিনি। ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অন্যপ্রকাশ থেকে তাঁর লেখা ইতিহাসনির্ভর গবেষণাধর্মী বই ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ বিপুল সাড়া ফেলে। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো ছিল তার কাজের অংশ। অনেক ঘুরে এখন স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তবে এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে গুরুত্বপূর্ণ নানা ইভেন্টের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কাভার করেছেন একাধিকবার। যুক্তরাজ্য ও ভারতের নির্বাচনেরও সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া ভুটানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন, গ্রিসে দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন আর ডেনমার্কের জলবায়ু সম্মেলন এবং অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যোগ দিয়েছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। আরও ভ্রমণ করেছেন শ্রীলংকা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান, জার্মানি, সুইডেন, ইতালি, ফ্রান্স এবং কানাডা। বাংলাদেশে পত্রিকা, অনলাইন এবং টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। সংবাদকর্মী হিসেবে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসেও কয়েকটি বাংলা ভাষার টেলিভিশন প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। একাত্তর টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর ছিলেন। সরাসরি সম্প্রচারিত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘একাত্তর জার্নাল’ সঞ্চালনা করতেন নিয়মিত। মঞ্চের অনুষ্ঠানেও তিনি প্রাণবন্ত; অনেকের প্রিয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার। পেয়েছেন জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ স্বর্ণপদক। সাংবাদিকতার জন্যে মোনাজাত উদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল পুরস্কার, ইউনেস্কো ক্লাব অ্যাওয়ার্ড, পরিবার পরিকল্পণা সমিতি পুরস্কার, সন্ধানী সেফ ব্লাড অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেছেন। সাংবাদিকতার উপর তার লেখা চারটি বই ‘গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা’, ‘টেলিভিশন সংবাদ ও সাংবাদিকতা’, ‘টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপনা’ এবং ‘টেলিভিশন সাংবাদিকতার সহজ পাঠ’ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। শামীম আল আমিন পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। ২০০০ সালের এম এস এস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে লাভ করেছেন মসউদ খান স্বর্ণপদক। একই বিভাগ থেকে স্নাতক করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে। বিতার্কিক হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার। ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সহসভাপতি। সূর্যসেন হল বিতর্ক ক্লাব (সূর্যসেন বিতর্ক ধারা) এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। হলটির হয়ে ১৫তম ও ১৬তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। তার লেখা ‘বিতর্কের সরল পাঠ’ এবং ‘বিতর্ক ও বিতার্কিক’ বই দুটি বহুল পঠিত। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটির সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। তার লেখা দুটি বই ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে। গল্পগ্রন্থ ‘The Deep Night Sky’ এবং শিশুতোষ গল্পের বই ‘Sulky Arisha and Her Squirrel পাওয়া যাচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন প্লাটফর্ম অ্যামাজন ডট কমে। শামীম আল আমিনের জন্ম ১ জানুয়ারি, ঢাকার শান্তিবাগে। এরপর থেকে কৈশোর পর্যন্ত সেখানেই বেড়ে ওঠা। বাবা মুন্সী মুনছুর আহমদ এবং মায়ের নাম মিসেস সালেহা বেগম। তার স্ত্রী কবি, ইয়োগা আর্টিস্ট এবং ফিটনেস এক্সপার্ট আশরাফুন নাহার লিউজা। এই দম্পতির একমাত্র কন্যা অপর্ণা আমিন পড়াশোনা করছে নিউইয়র্কে। এই পৃথিবী থেকে একদিন সব বৈষম্য ও অনাচার দূর হবে, মানুষে মানুষে সম্পর্ক হবে ভালোবাসা আর মমতার বিনিময়ে; এমন দিনের ভাবনায় লিখে চলেন তিনি। ক্লান্তিহীন পথিক তিনি হেঁটেই চলেছেন। থামার সময় যে তার নেই।