স্বর্ণলোভী রাজা মাইডাসকে অদ্ভুত এক বর দিয়েছিলেন দেবতারা-শুধু স্পর্শ দিয়ে যে-কোনও জিনিসকে সোনায় রূপান্তরিত করতে পারতেন তিনি। সেটা তার জন্য হয়ে দাঁড়ায অভিশাপ। ভুল করে নিজের মেয়েকে সোনার মূর্তি বানিয়ে ফেরেন তিনি। করুণ.... সেইসঙ্গে সুন্দর এক কাহিনি, তাই না? কিন্তু গল্পটা যদি গল্প না হয়? যদি ওটা সত্যি হয়ে থাকে? এত বছর পর পাগলাটে কোনও ভিনেন যদি সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে চায়... খুঁজে পেতে চায় রাজা মাইডাসের সমাধি.... এবং মাসুদ রানাকে ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাধ্য করে সেই কাজ করে দিতে? কী ঘটবে তা হলে? না, পাঠক, কল্পনার সাগরে ভেসে যাবার কোনও দরকার নেই। এই বইয়ের ভিতরেই রয়েছে সমস্ত প্রশ্নের জবাব। সেই সঙ্গে রয়েছে পাতায় পাতায় দমবন্ধ করা উত্তেজনা, রক্ত গরম করা অ্যাকশন আর বুদ্ধির মারপ্যাঁচ-সহ অনেক কিছু। তা হলে আর দেরি কেন, চলুন রানার সঙ্গে যোগ দিই শ্বাসরুদ্ধকর আরেকটি অভিযানে। কথা দিচ্ছি, হতাশ হবেন না। এ যেন অসম্ভবকে সম্ভব করবার চেষ্টা! গ্রিক পণ্ডিত আর্কিমডিসের তৈরি করা যে-ধাঁধা দু’হাজার বছরেও ভেদ করতে পারেনি কেউ, সেটাই সমাধান করতে চাইছে রানা মাত্র চারদিনে! নইলে খুন করা হবে পিতৃসম অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনকে। পাগলের মত চষে বেড়াচ্ছে ও দু-দুটো মহাদেশ। পাঠক, চলুন ওর সঙ্গে ঘোড়া ছোটাই ইংল্যাণ্ডের প্রান্তরে; চুরি করি প্রিসের জাতীয় জাদুঘরের অমূল্য সম্পদ; দুইশ’ মাইল বেগে গাড়ি চালাই জার্মানির ফ্রিওয়ে-তে; অথবা হারিয়ে যাই ইটালির ভূগর্ভস্থ প্রাচীন সুরঙ্গে, কিংবা আমেরিকার রাস্তায় জড়িয়ে পড়ি মরণপণ সংঘর্ষে। নিষ্ঠুর দুই শত্রু পিছু নেবে আপনার। পদে পদে থাকবে মৃত্যুর হাতছানি। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই, রানা পাশে রয়েছে আপনার। সমস্ত বাধা-বিপত্তি ঠেলে ওর সঙ্গে একসময় ঠিকই পৌঁছুবেন আপনি রাজা হচ্ছে? তা হলে চলুন, রওনা হই! সারাংশ পিতৃসম অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনকে বাঁচাতে দু-দুটো মহাদেশ পাগলের মত চষে বেড়াচ্ছে রানা। লক্ষ্য গ্রীক পন্ডিত আর্কিমিডিসের ধাঁধাঁর সমাধান করে রাজা মাইডাসের গোল্ডেন টাচের সন্ধান পেতে। একদিকে মাফিয়া রানি মায়া লরেঞ্জো অন্য দিকে মায়ার শত্রু গ্যারেট। মাঝখানে রানা। সঙ্গী ববি মুরাল ও রেমি যার বোনও বন্দী অ্যাডমিরালের সাথে। তিনজন মিলে শুরু হয় অসম্ভবকে সম্ভব করার অভিযান। আছে মিথ, সেই সাথে আধুনিক বিজ্ঞান। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চার।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।