"ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ১৯৪৭-এ দুশাে বছরের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ামাত্রই ভারত বহুদলীয় ব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা ও ব্যাপক রাজনৈতিক অধিকার সহ একটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ গ্রহণ করে। ব্রিটিশ শাসনকালের দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হয় এবং সে আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরত্বের জায়গা নেয় দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি। গত তিন দশকে এই বৃদ্ধি পৃথিবীর বৃহৎ দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম হয়ে ওঠে। সম্প্রতি কিছুটা শ্লথ হওয়া সত্ত্বেও এখনও এই বৃদ্ধিহার বিশ্বের সর্বোচ্চ হারগুলাের মধ্যে পড়ে। পরিবেশগতভাবে সুস্থায়ী দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্জনযােগ্য লক্ষ্য থেকেছে। ভারত: উন্নয়ন ও বঞ্চনা গ্রন্থে দেশের দুই অগ্রণী অর্থনীতিবিদ দেখাচ্ছেন যে, ভারতের প্রধান সমস্যা হল দেশের জনসাধারণ, বিশেষত দরিদ্র এবং মেয়েদের প্রয়ােজনগুলাের দিকে দৃষ্টিপাত না করা। সকলের অংশীদারি সহ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি থেকে পাওয়া সংসাধনগুলােকে লােকেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজে লাগানাের ব্যাপারে ব্যর্থতাটা বিরাট। বিদ্যালয় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যার মতাে সামাজিক পরিষেবার দিকগুলােতে অপ্রতুলতা বিস্তর, তার পাশাপাশি ঘাটতি আছে স্বচ্ছ জল, বিদ্যুৎ, নিকাশি ব্যবস্থা, পরিবহন এবং সাফাই ব্যবস্থার মতাে বস্তুগত পরিষেবাগুলির ক্ষেত্রে। সামাজিক ও বস্তুগত উন্নয়ন এবং মানব সক্ষমতার ক্ষেত্রে খামতিগুলাে আবার দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পক্ষে বাধাস্বরূপ হয়ে ওঠে; উল্টো দিকে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনের দেখানাে পথ ধরে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের এশীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি কার্যকরভাবে উঠে এসেছে। ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটিকে মূল্য দেওয়া বাস্তবিকই খুব জরুরি। কিন্তু, সেই সঙ্গে যেটা দরকার তা হল, ব্যর্থতাগুলাে নিয়ে সরকারি স্তরে নীতিগত পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি দেশে ভয়াবহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনাগুলাে নিয়ে জনপরিসরে স্পষ্টতর। প্রতর্ক ও অনুধাবন। অথচ, ভারতের গভীর বৈষম্যের কারণে গণ-আলােচনাগুলাে প্রধানত আটকে থাকে তুলনামূলকভাবে সচ্ছলদের সমস্যাগুলিতেই। বর্তমান বইটিতে বঞ্চনা ও অসাম্য এবং তাদের দূর করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার পাশাপাশি কীভাবে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে এগুলাে দূর করা সম্ভব হতে পারে, তা নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। "উন্নয়ন ও স্ব-ক্ষমতা" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার বিজেতা অমর্ত্য সেন দেখাচ্ছেন, কিভাবে অভুতপূর্ব প্রাচুর্য-সমন্বিত এই পৃথিবীতে ধনী ও দরিদ্র দেশ গুলির কোটি কোটি মানুষ এখনও পর্যন্ত অ-স্বাধীনতার শিকার।
এই বইটি অমর্ত্য সেন এর স্ব-ক্ষমতা তত্ত্বের একটি সহজবোধ্য ও প্রচন্ড মনোযোগ আকর্ষণকারী ভূমিকা।
“পৃথিবীর দরিদ্র ও সম্পদহীন মানুষের জন্য অমর্ত্য সেন এর চেয়ে অধিক ঋদ্ধ ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ আর কেউ নেই।আমাদের জীবনযাত্রার মানের পরিমাপ যে সম্পত্তির দ্বারা নয়, হওয়া উচিত স্বাধীনতার দ্বারা, এটা দেখিয়ে তাঁর রচনাগুলি উন্নয়নের তত্ত্ব ও প্রয়োগ কে বৈপ্লবিত করে তুলেছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তার উন্নয়নমূলক কাজে অধ্যাপক সেন-এর দৃষ্টিভঙ্গির প্রজ্ঞা ও মঙ্গলবোধের দ্বারা প্রভূতভাবে উপকৃত হয়েছে।” ...........................কোফি আন্নান, সেক্রেটারি জেনারেল, রাষ্ট্রসঙ্ঘ
“বইটিতে অমর্ত্য সেন ঠাসবুনোট অথচ প্রশস্ত আলোচনায় সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত আছে স্বাধীনতার প্রসার। ঐতিহাসিক উদাহরণ অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ প্রমাণ, এবং জোড়ালো ও তীক্ষ্ণ বিশ্লেষনের মাধ্যমে তিনি দেখান যে প্রশস্ত ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নয়ন স্বাধীনতার বিরোধী তো নয়ই, বরং স্বাধীনতাকে বাড়িয়ে তোলাই এর অন্তর্নিহিত বিষয়” .........................কেনেথ এ্যারো, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজেতা
অমর্ত্য সেন (Amartya Sen , জন্ম ৩রা নভেম্বর, ১৯৩৩) একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে ব্যাংক অফ সুইডেন পুরস্কার (যা অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) লাভ করেন। অমর্ত্য সেনই জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মানব উন্নয়ন সূচক আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডালে ভূষিত হন। তিনি বর্তমানে টমাস ডাব্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি হার্ভার্ড সোসাইটি অফ ফেলোস, ট্রিনিট্রি কলেজ, অক্সব্রিজ এবং ক্যামব্রিজের একজন সিনিয়র ফেলো। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেলথ ইমপ্যাক্ট ফান্ডের অ্যাডভাইজরি বোর্ড অফ ইনসেন্টিভ ফর গ্লোবাল হেল্থ্ এর সদস্য। তিনি প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি একটি অক্সব্রিজ কলেজের প্রধান হন। এছাড়াও তিনি প্রস্তাবিত নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কাজ করেছেন।অমর্ত্য সেন এর লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোঃ Development as Freedom(বাংলা অনুবাদে উন্নয়ন ও স্ব-ক্ষমতা), Rationality and Freedom,The Argumentative Indian(বাংলায় তর্কপ্রিয় ভারতীয়)এবং The Idea of Justice ,Identity and Violence The Illusion of Destiny(বাংলায় পরিচিতি ও হিংসা). অমর্ত্য সেনের লিখিত বই বিগত চল্লিশ বছর ধরে প্রায় তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ।