“সাক্ষী কেবল চৈত্রমাসের দিন” বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া অনেক অনেকদিন আগে, দূর কোনাে এক দেশে এক গ্রাম ছিলাে। গ্রামের নাম দেওভােগ। এক চৈত্রমাসের দিনে দেওভােগ গ্রামের ওপর নেমে আসে খুব কঠিন এক বিপদ। গ্রামের সবচেয়ে শান্ত সুশীল ও সুধীর যে মেয়েটা সে খােয়া যায়। কই যায় জুলেখা বিবি! কেমনে সে পুরাে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়! সেই রহস্যের কোনাে মীমাংসা মেলে না। তার সন্ধান করে করে দেওভােগ গ্রাম বেতালা, বেদিশা হতে থাকে। এমন চান্দি তপ্ত করে দেওয়া ঘটনা দেওভােগ গ্রামে কবে আর ঘটেছিলাে! কখনাে ঘটেনি। মানুষের পরান ভয়েডরে ধুম ধড়ফড়াতে থাকে, গাছের পাতারা বিরামহীন ছটফটাতে থাকে, সকল পুষ্কুনীর পানি অবিশ্রাম ছলবলাতে থাকে; আর একটি অন্তর, ইসুফ মিয়ার অন্তর, গােপনে-আড়ালে পুড়ে পুড়ে ভস্ম হতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। একা একা একা। কেনাে! কেন না সে গভীররকম প্রেমে পড়েছিলাে! সে প্রেম এক তরফা, তাতে কী! অন্তরে তাে তার আশা ছিলাে! জুলেখাকে এক ঝলক করে হলেও চোখের দেখাটা দেখতে পাবার আশা! যদিও তার সকল আশা এক ফুকারে নিভিয়ে দিতে কিছুমাত্র পরােয়া করে নি সংসার ও-সমাজ ও-নিয়তি। ‘সাক্ষী কেবল চৈত্রমাসের দিন’ উপন্যাসের আদি পর্বে আকিমুন রহমান বলেছেন কোন গহন দূরদেশের একা ও সরল, ভীরু ও কুণ্ঠিত এক বেদনার গল্প । এটি মনুষ্য-অন্তরের গল্প যতােটা, যতােটা তা লৌকিক সমাজ-সংসারের গল্প; ততােটাই এটি এক অলৌকিক প্রেম-পরস্তাব-কথা। এ-উপন্যাসের আদি পর্বে বাস্তবতার মৃত্তিকায় যে গল্পের উদ্গম ঘটেছে, তার প্রপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে লৌকিক জগতের সীমানার বাইরে; অলৌকিকের অনেক অস্পষ্ট আলাে এবং অনেক দ্যুতিজড়ানাে অন্ধকারের ভুবনে। উপন্যাসের অন্ত পর্ব ধারণ করে আছে কাহিনীর ওই অংশটি। মনিরুল মনির।
ইনডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ অধ্যাপনারত আকিমুন রহমান পিএইচ ডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ; আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ, সােনার খড়কুটো, পাশে শুধু ছায়া ছিলাে, পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া এ মাছি, এইসব নিভৃত কুহক।