বিশ্ব এখন প্রস্তুত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-পরবর্তী ভূরাজনৈতিক কাঠামোর জন্যে। কেমন হবে সেই বিশ্ব? কে হবে এর নিয়ন্ত্রক? যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব ধরে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে এবং তাদের প্রক্সিগুলির উপর নির্ভর করছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর করছে তুরস্ক, সৌদি আরব, আমিরাত এবং মিশরের উপর। পশ্চিম আফ্রিকাতে ফ্রান্সের নেতৃত্বকেই মেনে চলছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকায় ভারতকে কাছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ব এশিয়ায় চীনকে ব্যালান্স করতে জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনকে ব্যবহার করছে তারা। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ এখন আর নিরঙ্কুশ নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের ভয়ে ভীত; বিশেষতঃ অজনপ্রিয় অত্যাচারী শাসকেরা।
পশ্চিমা শক্তি ব্রিটেন চেষ্টা করছে এই সুযোগে নিজের প্রভাব বাড়িয়ে নিতে। কিন্তু ব্রেক্সিটের চাপই যেখানে ব্রিটিশ জনগণ নিতে পারছে না, সেখানে স্কটল্যান্ডের গণভোটকে কিভাবে নেবে তারা? ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শোষণের স্মৃতিগুলিও মুছে যায়নি। ইউরেশিয়ার শক্তি রাশিয়া এবং চীন আদর্শিক শক্তি নয়। প্রযুক্তি এবং অর্থনীতিই এদের শক্তির ভিত; আদর্শ নয়। তাই রুশ এবং চীনা জাতীয়তাবাদ যে বিশ্বের নেতৃত্ব নিতে পারবে, তা বিশ্বাসযোগ্যতা পায়না। তুরস্ক চেষ্টা করছে ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু সেকুলার আদর্শের মাঝে থেকে ইসলামের নেতৃত্ব নিতে গেলে সেই নেতৃত্ব পশ্চিমা সেকুলারদের হাতেই যাবে। তথাপি এই ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’এর মূলে রয়েছে মুসলিম বিশ্বের জনগণের আদর্শিক নেতৃত্বের আকাংক্ষা, যা পশ্চিমাদের দৃষ্টিকে এড়ায়নি। এই আকাংক্ষাই পশ্চিমাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সামনের দিনের ভূরাজনৈতিক ভরকেন্দ্রটা কোথায় হবে।