মঈনুল আহসান সাবেরের লেখালেখি এক প্রচণ্ড জীবনশক্তিকে ধারণ করে। বাস্তবতার ছবিই তিনি আঁকেন, কিন্তু এই আঁকার মধ্য দিয়ে আমাদের ইতিহাসের, সমাজের, জীবনের, প্রাত্যহিকতার প্রতিটি শক্তিবিন্দুকে একত্র করেন । পাঠক বোঝে এই ভূখণ্ডের কোনো টুকরো টুকরো ছবি নয়, বরং এক পূর্বাপর সম্পর্কিত, ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনে জড়িত ও জারিত, এর আশা-নিরাশা-ভালোবাসার চিহ্নগুলো ধারণ করা চলমান আখ্যান তিনি তার লেখালেখিতে ধারণ করেন। সাবের গতানুগতিক ধাঁচের গল্প-উপন্যাস লেখেন। তিনি স্পষ্টতই নিরীক্ষাধর্মী ও বহুমুখী । তার মতো বিভিন্ন বিষয়ে এত স্বার্থক লেখা আর কেউ লিখেছেন কি না, জানা নেই। তার লেখা কাহিনি বর্ণিত নয়, আচার কাহিনি বর্ণিতও নয় । সেখানে কাহিনি ছাড়াও, কাহিনিকে অতিক্রম করা, আরো বিশাল, আরো গভীর এক বোধের সন্ধান আমরা পাই। তার আরো কৃতিত্ব এই যে, লেখায় নিজের কোনো ইচ্ছা, আইডিয়া, সমাধান তিনি চাপিয়ে দেন না। তিনি কারো পক্ষ নেন না, পরোক্ষভাবেও । তিনি শুধু জানিয়ে যান তার চারপাশ। কাছের ও দূরের সাবেরের বুননকৌশল ও অসাধারণ । শিল্পীর প্রয়োজনীয় নির্লিপ্তি তিনি বজায় রাখেন। নিজ শিল্পসৃষ্টির পেছনে তৃতীয় ব্যক্তি পুরুষ হয়ে থাকার এক আশ্চর্য ক্ষমতা তার আছে । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মঈনুল আহসান সাবেবের লেখাগুলো নিয়েও ওপরের কথাগুলোই প্রযোজ্য ।
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।