“ক্ষমতা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ সমাজ-গতিবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয় চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত দু জন মনীষী কার্ল মার্ক্স ও সিগমন্ড ফ্রয়েড যথাক্রমে সম্পদ ও যৌনতাকে শনাক্ত করেছেন। কিন্তু বার্ট্রান্ড রাসেল তার অনবদ্য অনুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষমতাকে সমাজ গতিবিজ্ঞানের কেন্দ্রিক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ক্ষমতার ক্রমাগত ও চরম ব্যবহারে বিভিন্ন মাত্রায় এর পরিবর্তন ও রূপান্তর ঘটে। বার্ট্রান্ড রাসেলের Power তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চিন্তায় একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে আঠারােটি অধ্যায় রয়েছে। তিনি এ গ্রন্থে ক্ষমতাস্পৃহা, নেতা ও অনুসারী, ক্ষমতার প্রকার, রাজকীয় ক্ষমতা, যাজকীয় ক্ষমতা, নগ্ন ক্ষমতা, ক্ষমতা-দর্শন, ক্ষমতা বশীকরণ ইত্যাকার বিভিন্ন বিষয়ে মনােজ্ঞ ও বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানগর্ভ আলােচনা করেছেন । পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির রূপান্তরের মতােই ক্ষমতারও রূপান্তর ঘটে। শক্তির মতাে ক্ষমতারও বিভিন্ন রূপ রয়েছে এবং এর রূপান্তর একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও অনিবার্য প্রক্রিয়া। রাসেল ক্ষমতার আলােচনায় পদার্থবিজ্ঞানের এ সূত্রটিকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। ক্ষমতার বহুমাত্রিকতা ও এর বিচিত্র ব্যবহার শনাক্তকরণে রাসেলের প্রয়াস এক অনন্যসাধারণ উদ্যোগ।
(১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক.যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়, এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে এবং তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাসেল এবং হোয়াইটহেড একত্রে প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকা নেন, ফলস্বরূপ তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই কারণে ১৯৬১ সালে তাঁকে আবার কারাদনণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৭০ সালে বারট্রান্ড রাসেল মৃত্যুবরণ করেন।