চারপাশে আলো-আঁধারির খেলা। এর মাঝে একজন মানুষ স্টেজে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার সামনে অনেকগুলো চেয়ারে আরো অনেক মানুষ সমাসিন। তারা সবাই স্টেজের সেই মানুষটির দিকে তাকিয়ে আছেন। কী বলবেন তিনি?
কীভাবে উপস্থাপন করবেন নিজের না বলা কথামালা? এই প্রশ্ন দর্শক শ্রোতাদের মনে। সেই সাথে প্রশ্নগুলো স্টেজের মানুষটির মনেও সমানভাবে তোলপাড় তুলছে। তার হাত-পা ঘামছে। হাঁটু কাঁপছে। তিনি পারবেন তো! এটি একটি পাবলিক স্পিকিং এর চিত্র।
কারো সামনে কথা বলার সময় আমাদের ভাবতে হয়, কারণ মুখ দিয়ে যা একবার বের হয় তা আর ফেরতযোগ্য নয়। বলে ফেলা কথাগুলো আর মুছে ফেলাও সম্ভব হয়না। তাই যোগাযোগের অন্য সব মাধ্যমের থেকে মুখের কথা অনেক গুরুত্ববহ মাধ্যম। আমরা কীভাবে কথা বলতে পারি বা বলব? অনেকে ভাবতে পারেন কীভাবে কথা বলব এটা আবার শিখতে হয় নাকি? মানুষ জন্মের পরপরই এই মাধ্যমটি রপ্ত করা শেখে ঠিকই তবে এই মাধ্যমটির যথাযথ ব্যবহারের উপর আমাদের মান-সম্মান এবং ভাল-মন্দ নির্ভর করে। আবার মানুষ কথার দ্বারা যতটা আন্দোলিত হয় ততটা আর কিছুতে হয় না। যেমন আমরা যখন কাউকে আমাদের ভালোলাগার কথা জানাই তখন সে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , কাউকে যখন ঘৃণার কথা জানাই তখন সে দুঃখ অনুভব করে। এভাবে কথার দ্বারা আমাদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষ যখন লিখতে জানতো না তখনও কিন্তু সে বলতে জানতো। তাই ‘কথা’ একটি প্রাচীন শিল্প। শুরুর দিকে এর শিল্প গুরুত্ব না থাকলেও মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে জ্ঞান চর্চার অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে কথার শিল্পগুণ এবং শৈল্পিক দিক বিকশিত হতে থাকে।
স্কুলের একটি ক্লাসে ইংরেজির শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন- আজ ক্লাস নাইনে তোমাদের সাথে আমার প্রথম ক্লাস। আজ আমি পাঠ্য বই থেকে কোন কিছুই শেখাবো না। আজ একটি প্রশ্ন করব, তোমরা উত্তর দাও দেখি! বল তো পৃথিবীতে কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি তিতা সেই সাথে সবচেয়ে বেশি মিষ্ট ও ? আমি ধীরে ধীরে জবাব দিলাম ‘স্যার মানুষের মুখের কথা সবচেয়ে বেশি তেতো আবার মিষ্ট ও।’ স্যার হাসলেন এবং ধন্যবাদ জানালেন।
যে কথা একই সাথে তেতো আবার মিষ্টও, সেই কথা থেকে তিক্ততা ঝেরে ফেলে একে সুগার কোটেড রাখা যায় কী করে? উপায় কী? উপায় অবশ্যই আছে। সেই উপায়ে একজন মানুষ সারাবিশ্বে জনপ্রিয় বক্তায় পরিণত হতে পারেন, শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিতে পারেন সর্বোপরি এই অশান্তি অরাজতায় ছাওয়া পৃথিবীতে সুন্দর কথার সুবাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। আমরা মানুষ হিসেবে একজন কথক, কথা বলতেই হয়। কথা না বললে আসলে চলেনা। আমরা ব্যক্তিজীবনে যেভাবে কথা বলি তার মাঝেও থাকে অনেক নিয়ম- কানুন। আদব-কায়দা। যাকে তাকে যখন তখন যে সে কথা বলা যায় না। আবার আমরা যখন সামষ্টিক জীবনে অনেক মানুষের সামনে কথা বলি তখন সেখানেও বিরাজ করে কিছু আদব-কানুন।
‘টেড টকস’ গ্রন্থটি জনসম্মুখে কথা বলার বিশেষ বিশেষ নিয়ম সমৃদ্ধ একটি মাস্টারপিস গ্রন্থ। এটি জনসম্মুখে কথা বলার বিশেষ গ্রন্থ হলেও এর একেকটি নিয়ম আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কোন কথাটি ব্যক্তি জীবনে বলা গেলেও জনসম্মুখে বলা উচিৎ নয়, জনসম্মুখে কথা বলার সময় কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হয়, কোনটি করণীয় এবং বর্জনীয়, সফল মানুষেরা কীভাবে কথা বলেন, নিজের মাথায় আইডিয়া গিজ গিজ করছে অথচ তা প্রকাশের উপায় পাচ্ছেন না- সেই উপায়, গল্প- ব্যাখ্যা- তথ্যের যথাযথ ব্যবহারের নিয়ম- কানুনসহ আরো অনেককিছুর সমাহার এই গ্রন্থটি।
গ্রন্থটি মোট পাঁচটি অংশের সমন্বয়। মূল পাঁচটি অংশের ভেতরে রয়েছে আরো অনেকগুলো অংশ যেগুলোতে কথার শিল্প বর্ণিত হয়েছে। মূলত ‘টেড টকস’ হলো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রকাশের প্রধান শিল্প ‘কথা’র নির্দেশনা মূলক গ্রন্থ। গ্রন্থটি লিখেছেন বিশ্বের তুমুল জনপ্রিয় ও শিক্ষামূলক প্পলাটফর্ম টেড স্টেজের কর্ণধার ক্রিস অ্যান্ডারসন।
বিখ্যাত লেখক এলিজাবেথ গিলবার্ট বলেন, ‘পাবলিক স্পিকিং এর বৈজ্ঞানিক ও শৈল্পিক চমৎকারিত্ব সম্পর্কে ক্রিসের মতো কেউ বুঝেন না। অন্তত এই দুনিয়ায় না। তিনি বছরের পর বছর ধরে বক্তাদেরকে সমানভাবে উৎসাহিত করে আসছেন। এমনকি একজন বক্তা যখন ভয়ে ভীত, স্নায়ুচাপে পীড়িত তখনও কীভাবে স্টেজে সবচেয়ে ভালভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা যায় সেই নির্দেশ তিনি দিয়ে আসছেন। কথা বলার নির্দেশনা সংবলিত এই গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত এবং যোগ্য। গ্রন্থটি আরো অনেকের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ হবে।’
আমরাও তাই চাই। সেই দিক বিবেচনায় এই গ্রন্থটি অনুবাদের প্রয়াস। গ্রন্থটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কথায় প্রাণ স্পন্দন জাগ্রত করে কথাকে আরো অর্থবহ করে তুলতে পারলে আমাদের প্রয়াস সফল ও সার্থক হবে । টেড টকস সূচিপত্র * লেখকের কথা ১৩ * প্রথম ভাগ : কথা বলার বুনিয়াদ প্রথম অধ্যায় : উপস্থাপনা (২৩-৩৪)* দুঃসময় ৩০ * সিংহ হৃদয়ের ছেলেটি ৩৪ দ্বিতীয় অধ্যায় : আইডিয়ার হাতেখড়ি (৩৮-৫৪)* আইডিয়া দিয়ে শুরু ৪১ * গড়িমসি না রাখা ৪৫ * ভাষার আশ্চর্যজনক কার্যক্ষমতা ৪৯ * শব্দ প্রয়োগ ৫২ * শব্দে শব্দে ভ্রমণ ৫৪ তৃতীয় অধ্যায় : পাতানো ফাঁদ (৫৫-৬৩)* ব্যবসার ধান্দা ৫৬ * প্রস্তুতিহীনতা ৫৯ * প্রতিষ্ঠান নয় ৬১ * উদ্দীপনা ৬৩ চতুর্থ অধ্যায় : কথার সারবস্তু (৬৭-৮৬)* ভুল পদ্ধতি ৭৬ * সঠিক পদ্ধতি ৭৭ * বক্তৃতার গঠন ৮২ * শক্ত বিষয় ৮৪ * আপনার করণীয় ৮৬ দ্বিতীয় ভাগ : কথার অনুষঙ্গ পঞ্চম অধ্যায় : সংযোগ স্থাপন (৮৯-১১১)* চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন, ডান দিক থেকে শুরু করুন ৯২ * নিজেকে মেলে ধরুন ৯৫ * কথাগুলো ভালোলাগার তাই না? ৯৬ * হাসান তবে অস্বস্তি বা বিব্রতবোধের জন্ম দেবেন না ৯৯ * অহংবোধ ও নিজেকে জাহিরের প্রবণতা ১০৫ * গল্প বলুন ১০৮ * আহ! রাজনীতি ১১১ ষষ্ঠ অধ্যায় : বর্ণনা প্রদান (১১৪-১২৫)* রূপক ও নীতিকথার শক্তি ১২৫ সপ্তম অধ্যায় : ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ (১২৮-১৪৩)* জ্ঞানের অভিশাপ ১৩৭ * ব্যাখ্যা থেকে উত্তেজনার পথে ১৪৩ অষ্টম অধ্যায় : উদ্বুদ্ধকরণ (১৪৭-১৫৮)* ভিত্তি প্রস্তুত করা ১৫০ * যুক্তি ১৫৪ * রহস্যের সন্ধান ১৫৬ * যুক্তির বাইরে গিয়ে ১৫৮ নবম অধ্যায় : উদঘাটন (১৬২-১৮২)* অজানার পানে ১৬৪ * চাক্ষুষ প্রমাণ ১৭০ * স্বপ্নালু গন্তব্য ১৭৪ * যেমন খুশি তেমন সাজো ১৮২ তৃতীয় ভাগ : প্রস্তুতি পর্ব দশম অধ্যায় : স্ক্রীন প্রদর্শন (১৮৪-২০৭)* তথ্য প্রকাশে ১৮৭ * ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ১৮৮ * ¯¬াইডে আনন্দের সন্ধান ১৯৩ * সফটওয়্যার প্রেজেন্টেশন ১৯৫ * হাইডে অক্ষরের ব্যবহার ১৯৬ * ফন্ট সাইজ ১৯৬ * ফন্ট ব্যাকগ্রাউন্ড ১৯৭ * ফন্ট কালার ১৯৭ * ¯পষ্টতা নিশ্চিতকরণ ১৯৮ * ব্যাখ্যা এবং ডায়াগ্রামের ব্যবহার ১৯৯ * ফটো ক্রেডিট ১৯৯ * আপনি ও আপনার টিমের ছবি প্রদর্শন ২০০ * ভিডিও ২০১ * হাইডের স্থানান্তর ২০২ * ফাইল পাঠানো ২০৩ * বৈধতা ২০৪ * পরীক্ষা ২০৪ * ডিজাইনারের কাজ ২০৬ * ভার্সন নিয়ন্ত্রণ ২০৭ একাদশ অধ্যায় : স্ক্রিপ করবেন নাকি করবেন না (২১০-২২৭)* স্ক্রিপ্ট বক্তব্য ২১৬ * স্ক্রিপ্টহীন অলিখিত বক্তব্য ২২৭ * দ্বাদশ অধ্যায় : স্টেজ পূর্ববর্তী অনুশীলন ২৩৭
* ত্রয়োদশ অধ্যায় : শুরু এবং শেষ (২৫০-২৭৯)* ভালোভাবে শুরু করার চারটি উপায় ২৫১ * নাটকিয়তার সন্ধান দিন ২৫৩ * ঔৎসুক্য জাগিয়ে তুলুন ২৫৬ * স্লাইড, ভিডিও বা প্রদর্শিত অন্যান্য বিষয়গুলো আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করুন ২৬১ * উদ্দীপ্ত করুন তবে খেলো হবেন না ২৬৩ * শেষ করার সাতটি উপায় ২৬৯ * পেছন পানে চাই ২৭২ * কাজের কথা বলি ২৭৩ * ব্যক্তিগত অঙ্গিকার ২৭৪ * মূল্যায়ন করুন, দূরদৃষ্টির সন্ধান দিন ২৭৬ * সন্তোষজনক সারমর্ম ২৭৭ * সামঞ্জস্য বিধান ২৭৮ * গীতিময় শব্দচয়ন ২৭৯ চতুর্থ ভাগ : স্টেজ* চতুর্দশ অধ্যায় : পোশাক পরিচ্ছদ ২৮১ পঞ্চদশ অধ্যায় : মানসিক প্রস্তুতি (২৮৭-২৯৪)* ভয়কে উৎসাহ উদ্দীপনারূপে ব্যবহার করুন ২৯১ * শরীরকে সহায়ক করে তুলুন ২৯১ * পানি পান করুন ২৯২ * পাকস্থলি খালি রাখবেন না ২৯২ * নিজের দুর্বলতার প্রকাশ ঘটাতে পারেন ২৯৩ * দর্শক শ্রোতাতের মাঝে বন্ধু খুঁজে নিন ২৯৩ * সহায়ক পরিকল্পনা গ্রহণ করুন ২৯৪ * বক্তৃতায় মনোনিবেশ করুন ২৯৪ ষোড়শ অধ্যায় : স্টেজে কী থাকবে, কী থাকবে না (২৯৬-৩০৮)* স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরী ৩০০ * নির্দেশক হিসেবে স্লাইড ৩০১ * হাতে ধরে রাখা নোট ৩০১ * স্মার্টফোন অথবা ট্যাব এর ব্যবহার ৩০২ * কনফিডেন্স মনিটরের ব্যবহার ৩০৩ * টেলিপ্র¤পটারের ব্যবহার ৩০৭ * অতি সাধারণ লেকটার্নের ব্যবহার ৩০৮ সপ্তদশ অধ্যায় : কণ্ঠস্বর এবং উপস্থাপনা (৩১১-৩২৬)* কথা বলার ধরন ৩১৫ * শারিরীক ভঙ্গি ঠিক রাখা ৩২২ * স্বাধীনতা ৩২৬ অষ্টাদশ অধ্যায় : নতুন কিছু (৩২৭-৩৪৬)* নাটকীয় সাজসরঞ্জাম ৩২৮ * বিস্তৃত দৃশ্যপট ফুটিয়ে তোলার স্ক্রিন ৩৩০ * বহুমাত্রিক উদ্দীপনা ৩৩১ * ডিজিটাল অডিও ফাইল তৈরী ৩৩২ * ব্যাখ্যামূলক ইন্টারভিউ ৩৩৩ * কাব্য কথা ৩৩৫ * ভিডিও কাব্য ৩৩৬ * মিউজিক ব্যবহার ৩৩৬ * লেসিগ মেথড ৩৩৭ * দুজন উপস্থাপক ৩৩৮ * বিতর্কের নতুন রূপ ৩৪০ * অধিক সংখ্যক স্লাইড ৩৪১ * সরাসরি প্রদর্শনী ৩৪২ * সারপ্রাইজ ৩৪৪ * উপস্থিত হওয়ার ভিন্ন মাধ্যম ৩৪৫ * সমবেত দর্শক শ্রোতাহীন কথা ৩৪৬ * পঞ্চম ভাগ : অনুচিন্তনঊনবিংশ অধ্যায় : বক্তৃতার রেঁনেসা (৩৪৯-৩৫৯)* জ্ঞানের এই সময় ৩৫৯ বিংশ অধ্যায় : গুরুত্ব (৩৬৪-৩৭৪)* টেড এক্স ৩৭২ * উপস্থাপন নিয়ে বাচ্চাদের জন্য প্রোগ্রাম ৩৭৩ * নিজের বক্ততৃা আপলোড করুন ৩৭৪ * একবিংশ অধ্যায় : আপনার পালা ৩৭৫ * কৃতজ্ঞতা ৩৮২
Chris Anderson (born July 9, 1961) is a British-American author and entrepreneur. He was with The Economist for seven years before joining WIRED magazine in 2001, where he was the editor-in-chief until 2012. He is known for his 2004 article entitled The Long Tail; which he later expanded into the 2006 book, The Long Tail: Why the Future of Business Is Selling Less of More. He is the cofounder and current CEO of 3D Robotics, a drone manufacturing company.