১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী থেকে ইংল্যান্ড ও ভারতভূমি হয়ে বাংলাদেশের মহান স্থপতি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশের বুকে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গভূমিতে এক অভিনব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল । প্রিয়নেতাকে কাছে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেয়েছিল। শ্মশান। বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল রক্তাক্ত, গুলিবিদ্ধ, গৃহহীন বাঙালি জাতি । ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরেই দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন বঙ্গবন্ধু । তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। শক্তিশালী হয়ে ওঠে বাংলার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের নানা কৌণিক বিশ্লেষণ এখন সময়ের দাবি। সেই চিন্তা সামনে রেখেই ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : শতপ্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থটি প্রকাশিত হলো। এ গ্রন্থে বাংলাদেশের একশজন নবীব-প্রবীণ প্রাবন্ধিকের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি কিভাবে তারা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর। স্বদেশ-প্রত্যাবর্তনকে মূল্যায়ন করেছেন তার একটি পরিষ্কার পর্যবেক্ষণ পাওয়া যাবে । “অবশেষে আমি নয় মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি। এ নয় মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে। আমাকে যখন আমার মানুষদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তারা। কেঁদেছিল; আমাকে যখন বন্দী করে রাখা। হয়েছিল, তখন তারা যুদ্ধ করছিল, আর আজ যখন আমি তাদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, তখন তারা বিজয়ী । আমি ফিরে যাচ্ছি তাদের। নিযুত বিজয়ী হাসির রৌদ্রকরে । আমাদের। বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন। আমাদের সামনে তাতে যোগ দেয়ার জন্যে আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে। আমি ফিরে যাচ্ছি আমার হৃদয়ে কারো জন্যে কোনো বিদ্বেষ নিয়ে নয়, বরং এ পরিতৃপ্তি নিয়ে যে অবশেষে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের, অপ্রকৃতিস্থতার বিরুদ্ধে প্রকৃতিস্থতার, ভীরুতার বিরুদ্ধে সাহসিকতার, অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের এবং অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হয়েছে।।” - শেখ মুজিবুর রহমান [উৎস: ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ : নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ]