বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাজারে এতাে বই থাকতে, কেন এই গ্রন্থ? আসলে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত যে বাংলাদেশ, তার কর্ণধার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন তার বয়স মাত্র ৫১ বছর। ভারত, পাকিস্তান, চায়না-বাংলাদেশের সঙ্গে নানা কারণে সম্পর্কযুক্ত কাছাকাছি দেশগুলাের স্বাধীনতাকালে তাদের নেতাদের বয়স ছিল কিন্তু আরও বেশি। ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় মহাত্মা গান্ধীর বয়স ছিল ৭৮ বছর, পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় মােহাম্মদ আলি জিন্নাহর বয়স ছিল ৭১ বছর, চীন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার সময় মাও সেতুং-এর বয়স ছিল ৫৬ বছর। বিশেষ করে, ভারত ও পাকিস্তান-যে দুটো। দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিচয় ১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত একসূত্রে গ্রথিত ছিল, সে দুটো দেশের জাতির পিতার চেয়ে স্বাধীনতাকালে বাংলাদেশের জাতির পিতার বয়স ছিল অনেক কম। এ অল্প বয়সেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব নিয়েছেন। জীবনে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি। কিন্তু দেশ-পরিচালনার সময় পেয়েছেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। তাঁর সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানাই রয়ে গেছে। বিশেষ করে অনুসন্ধিৎসু এবং শিক্ষার্থীদের কাছে এই মহান পুরুষকে সম্যকভাবে তুলে ধরার প্রয়াসেই এই গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে।
ড. সৌমিত্র শেখর কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, ভাষাচিন্তক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ড. শেখর সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে অত্যন্ত তরুণ বয়সে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেছেন (১৯৯৭) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিদ্যাসাগর-অধ্যাপক ড. ক্ষেত্র গুপ্তের তত্ত্বাবধানে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যােগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, প্রভাষক পদে পরের বছর, পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন হলে- প্রভাষক বৃদে যােগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সাহিত্য-আলােচনায় তিনি প্রয়ােগ করেন একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যক্তির মন-জোগান লেখায় বিশ্বাস নেই তাঁর। গতানুগতিক আলােচনায় দীর্ঘ দীর্ঘ উদ্ধৃতি ব্যবহার করে প্রাতিস্বিক’, ‘অভূতপূর্ব’, ‘তুলনারহিত শব্দের যত্রতত্র যে ব্যবহার, সেগুলাে তাঁর সাহিত্যালােচনায় একেবারেই দেখা যায় না। তাঁর রচিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলি: গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ (১৯৯৫); নজরুল-কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০১); বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (২০০৪); সিভিল সােসাইটি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০৪); ব্যাকরণ সন্ধান (২০০৬); কথাশিল্প অন্বেষণ (২০০৬); সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া (২০০৭); ষাটের কবিতা : ভালােবাসার শরবিদ্ধ কবিকুল (২০১০); ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক (২০১১); সরকারি কর্মকমিশন ও শিক্ষাভাবনা (২০১২); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: চেতনার বাতিঘর (২০১৩); নজরুল: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং শিল্পীর বােধ (২০১৩)। তাঁর বেশ কিছু সম্পাদিত-গ্রন্থও আছে। ড. শেখর বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ভাষা-সমিতির জীবনসদস্য। গবেষণার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিস এওয়ার্ড (২০০১) ও ময়েনউদ্দিন ফাউন্ডেশন পদক (২০০৮) লাভ করেন।