ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ডাকনাম রেণু। পিতা শেখ জহুরুল হক সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারের মধ্যমণি। পিতা-মাতার দুই কন্যা সন্তানের কনিষ্ঠজন তিনি। পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়াতে পিতা-মাতা তাঁকে আদর করে রেণু নামে ডাকতেন। এই মধুর নামটি বঙ্গবন্ধুর পরিবারেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন বঙ্গমাতা রেণুকে নিজ কন্যাসন্তানের ন্যায় আদর-যতেœ গড়ে তোলেন। শেখ পরিবারে ক্রমেই বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজির তাঁর আদর্শ ও মহানুভবতার জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি যেমন আদর্শ গৃহিণী, তেমনি শেখ পরিবারের নানা কর্মকাণ্ড পরামর্শ ও সহযোগিতার মূর্তপ্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাদেশ নামক মহাকাব্যের অবিসংবাদিত মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ সেই মহাকাব্যের মুকুটহীন সাম্রাজ্ঞী বাঙালি জাতির অগোচরেই রয়ে গেছেন। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব শিশু বয়সেই বঙ্গবন্ধুর ঘরণী হয়ে আসেন। এই অবুঝ, অবলা, অনাথ মেয়েটি মহাকাব্যের মূলনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রধান চালিকারূপে আবির্ভূত হন। নীরবে, নিভৃতে এই মহীয়সী রমণী স্বামীসেবা, সন্তান লালন-পালন, পিতৃতুল্য শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল, দেবর-ননদ সবারই পরিচর্যা করেছেন। তদুপরি বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গৃহের ভেতরে এমন একটি পরিবেশ উপহার দিয়েছিলেন, যার ফলে নেতা মুজিব দুর্গম গিরি, দুস্তর পারাবার পাড়ি দিতে পেরেছিলেন অবলীলাক্রমে। বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলন সংগ্রামে যখন বঙ্গবন্ধু বারবার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার, তখন বঙ্গমাতার ধৈর্য, সহনশীলতা, সহযোগিতা ও পরামর্শ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয় পাহাড়সম অটল বীরত্বের সাথে এগিয়ে চলার প্রেরণা যুগিয়েছে। এই মহীয়সী রমণীর বিস্তৃত জীবনের ক্যানভাস ও বঙ্গমাতা হয়ে ওঠার দৃষ্টান্তবহুল গুণাবলি ও আদর্শ নিয়ে এ যাবৎকালে যাঁরা লিখেছেন তাঁদের উল্লেখযোগ্য লেখার সংকলন গ্রন্থ ‘প্রণতি বঙ্গমাতা’।