"সেই বিদেশিনী“ বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: জীবন বদলাবার আশায়, সংসারে স্বচ্ছলতা আনবার আশায়, মা বাবা ভাইবােনকে সুখে রাখবার আশায়, স্বপন নামের মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবকটি চলে গিয়েছিল জার্মানীতে। সেখানে শ্রমিকের কাজ করে, হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে দেশে টাকা পাঠাচ্ছিল। স্বপন একটু রােগা, নরম নিরীহ ধরনের যুবক। একসময় সাহিত্যের ছাত্র ছিল। গােপনে গােপনে সে একজন রােমান্টিক কবি। ডায়রির পাতায় পাতায় কবিতা লিখে রাখতাে। কিন্তু জার্মানীতে কে মূল্য দেবে তার মনের, তার কবিতার! স্বাস্থ্য খারাপ বলে প্রায়ই কাজ চলে যায় তার। কাজের খোঁজে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ করেই তার দুঃখময় জীবনে আবির্ভাব ঘটে সতেরাে বছরের আশ্চর্য সুন্দর এক মেয়ে লিলিয়ানের। সেই মেয়ে তার জীবনে নিয়ে আসে পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ চাদের আলাে। স্বপনকে ভাল রাখবার জন্য ধীরে ধীরে প্রেমেপড়া বাঙালি মেয়েদের মতাে হয়ে উঠতে থাকে সে। স্বপনের কাছে শুনে শুনে বাঙালি মেয়েদের চালচলন, আচার আচরণ এবং চারিত্রিক গুণাবলী রপ্ত করতে থাকে। এইভাবে দুই ভুবনের দুজন মানুষ পরস্পরের প্রতি গভীরভাবে ঝুকে যায়। ভালবাসতে শুরু করে একে অন্যকে। এই অসামান্য প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস ‘সেই বিদেশিনী'।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।