পাথর সময় লেখা হয় ১৯৮৭ সালে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের পরের অস্থিরপর্ব পার হয়ে তখন এক নতুন সময়ের শুরু। ১৯৭১-এর পরাজিত শত্রুরা ফিরে এসেছে, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে নতুন এক প্রজন্ম তৈরি করা হয়েছে, যারা পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। নতুন এক সম্প্রদায় বিচরণ করছে রাজনীতি ও প্রশাসনে। যারা কখনো পরাজিত, কখনো অনৈতিক, কখনো দায়হীন এসেছে মাদক, এসেছে চাকচিক্য এর পাশাপাশি সরে গেছে, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে একটি বড় অংশ, যাদের যাওয়ার কথা ছিল সম্মুখভাগে সমাজের এক নতুন চেহারা সেটি। পাথর সময়ে উঠে এসেছে সেই সময়ের কথা। কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছে ‘সে’। পুরো কাহিনিতে তাকে আমরা ‘সে’ হিসেবে দেখি। আছে তার সহযোগী, শারীরিক স্থূলতা আর কালো বর্ণের করিৎকর্মা সে লোকটিকে বন্ধুরা ব্ল্যাক ডায়মন্ড বা সংক্ষেপে বিডি বলে ডাকে। কিংবা বিডি হয়তো সে সময়ের বাংলাদেশ। এর বিপরীতে আমরা দেখি মাহমুদ ও ইস্তিয়াককে। মাহমুদ পায়ে গুলিখাওয়া একাত্তরের সাহসী বীর। এখন কোণঠাসা। বাম রাজনীতিতে জড়িয়েও তাত্ত্বিক কারণে যে সুবিধা করতে পারেনি। হতাশ সে, কিন্তু ক্ষোভও তার কম নয়। কেন এমন হলো- এই জিজ্ঞাসা তাকে এখনো ব্যতিব্যস্ত করে তোলে আর আছে ইস্তিয়াক। ‘সে’ ইস্তিয়াকের বাবা। মাহমুদ তার দূর সম্পর্কের চাচা। ইস্তিয়াক, বয়সের কারণে যদিও চপলমতি, মাহমুদের কাছে আসে, বারবার আসে, জানতে চায়- এই যে সে চোখের সামনে দেখছে, বদলে যাচ্ছে অবস্থা, কেন, কী প্রক্রিয়ায় সেই বদলে যাওয়া, আর এর থেকে বেরিয়ে। আসার উপায়ই বা কী। ‘সে’ ও বিডি ইস্তিয়াক আর মাহমুদের সখ্য পছন্দ করে। পছন্দ করে না যখন, কী হয় পরিণতি? এই কাহিনিতে আরও আছে মা। অসহায় জননী। যেন পরিবারের কারো নজরে না-থাকা, উপেক্ষায় থাকা এই বাংলাদেশ। পাথর সময় প্রকাশের পরপরই আলোড়ন তুলেছে। তারপর বহু বছর ধরে, যতবার পাঠক এটি হাতে নিয়েছেন, আলোড়িত হয়েছেন। পাথর সময় এখনো তার প্রাসঙ্গিকতা এতটুকু হারায়নি। কারণ, পাথর সময় এখনো তার উপস্থিতি বহাল রেখেছে।
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।