হুসাইন ইবনে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু—ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম মহত্তম ব্যক্তিত্ব। বিশুদ্ধ উৎস হতে তার সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে প্রবীণ ও তরুণ—সকলেই উদগ্রীব। তার নানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিকে তাকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন, ওপরদিকে ছিল নবী তনয়া ফাতিমাতুয যাহরা রাযিয়াল্লাহু আনহা এবং আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহুর স্নেহছায়া। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে হুসাইন ইবনে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর জন্ম থেকে শাহাদাত পর্যন্ত সুবিস্তর জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে। এর প্রথম পর্বে রয়েছে, তার জন্ম ও বংশ-পরিচয় এবং হাদীসে বর্ণিত গুণাবলীর আলোচনা; এবং দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে, ইয়াজীদ ইবনে মুআবিয়ার হাতে বাইআত হতে হুসাইন ইবনে আলী এবং আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহুমার অস্বীকৃতি প্রদান, মক্কা অভিমুখে হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্থান এবং কারবালার প্রান্তরে তার শাহাদাতবরণ প্রভৃতির বর্ণনা। প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই হুসাইন ইবনে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর জীবনে রয়েছে শিক্ষা ও আদর্শ। বিশেষত, মুসলিম তরুণদের জন্য যা খুবই প্রেরণাদায়ক। মহান আল্লাহ তাআলাকে রাজিখুশি করার জন্য কীভাবে নিজের সর্বোচ্চ কুরবানি করতে হয়, তার জীবন থেকে আমরা সেই শিক্ষাই লাভ করি। উপরন্তু, যুলুমের বিরুদ্ধে হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর সুদৃঢ় অবস্থান ইতিহাসের পাতায় চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০