প্রথম অধ্যায় ইতিহাস পুরাতত্ত্বানুসন্ধানের প্রধান সাধন, ইতিহাস ভিন্ন অতীত কালের কোনো সত্যই নিঃসন্দেহরূপে নিরূপিত হয় না। ইতিহাসের এতাদৃশ প্রয়োজন সত্ত্বেও ভারতবর্ষের একখানিও প্রকৃত ইতিবৃত্ত বিদ্যমান নাই। প্রাচীন আর্যগণ সাহিত্য, গণিত, দর্শন, শিল্প প্রভৃতি শাস্ত্রানুশীলন করিয়া পারদর্শিতা লাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু দুরপনেয় অদৃষ্ট-দোষে ইহাদিগের বহুল পরিমাণে ঐতিহাসিক গ্রন্থ প্রণয়নে অভিরুচি হয় নাই। রামায়ণে ইক্ষ্বাকু-বংশীয় কতিপয় নৃপতির এবং মহাভারতে কুরু পাণ্ডবদিগের বিবরণ সুবিস্তাররূপে বর্ণিত আছে, পৌরাণিক গ্রন্থে ভারতীয় নৃপতিগণের বংশপরম্পরার নামোল্লেখ এবং তাহাদিগের প্রাদুর্ভাবকালের আনুষঙ্গিক ঘটনাগুলি বিবৃত আছে, এবং রাজতরঙ্গিণী প্রভৃতি দুই একখানি গ্রন্থে দেশ বিশেষের বিবরণ লিখিত আছে, কিন্তু সমগ্র ভারতবর্ষের সূত্রবদ্ধ ও ধারাবাহিক ইতিবৃত্ত কোনো গ্রন্থেই লিপিবদ্ধ নাই, এবং বিপ্লবের পর বিপ্লবে ভারতের ইতিহাস-স্থানীয় অনেক বিষয় বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। অতএব পূর্বতন সময়ের কোনো বিষয় অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলে বহুল আয়াস ও আহরণ-ক্লেশ সহ্য করিতে হয়। প্রকৃত ইতিহাস অভাবে কবি-কল্পিত কাব্য শাস্ত্র, লোক পরম্পরাগত কিংবদন্তী, কুলজিগ্রন্থ, তাম্রশাসন ও প্রস্তর-খোদিত বর্ণনাদির আশ্রয় গ্রহণ ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। যদিও এই সকল উপকরণোপরি সম্পূর্ণরূপে আস্থা স্থাপন করিতে পারা যায় না, এবং কাব্য শাস্ত্র ও জন- প্রবাদ প্রভৃতি দ্বারা ঘটনা বিশেষ কালক্রমে বিকৃত অথবা অতিরঞ্জিত হইয়া যায়, তথাপি নিরপেক্ষ অনুসন্ধিৎসুগণ গবেষণা-বলে শাখা পল্লব ছেদন করিয়া স্কন্ধ অনাবৃত করিতে পারেন। ফলত হিন্দুদিগের গ্রন্থাদি অস্পষ্ট, অথবা অতিরঞ্জিত দোষে দূষিত হইলেও স্থূল বিষয়গুলি অনেক স্থলে যথাযথ বর্ণিত থাকে। আজকাল ভারতের সৌভাগ্য বলে অনেকেই এবংবিধ পুরাতত্ত্বানুসানে মনোনিবেশ করিয়াছেন; ঈদৃশী গবেষনায় এবং ঈদৃশী চেষ্টায় ভারতের ঐতিহাসিক ক্ষেত্র ক্রমেই পরিষ্কৃত হইতেছে।
জন্ম ১৯৩৯ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় । ১৯৪৭ সাল থেকেই কলকাতায় বড় হওয়া ও লেখাপড়া শেখা। ১৯৬১ সালে যুগান্তর পত্রিকা গোষ্ঠীর সাপ্তাহিক ‘অমৃত' পত্রিকায় যোগ দেন । তারপর থেকে যুগান্তর, অমৃতবাজার পত্রিকা এবং সংবাদ প্রতিদিন-এ চাকরি জীবন কাটিয়ে ২০০২ সাল থেকে দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজে ব্যস্ত। ১৯৮৭ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপর স্বতন্ত্র দুখানি বই লেখেন—যা ১৯৯৯ সালে একখণ্ডে চব্বিশ পরগনা-উত্তর-দক্ষিণ-সুন্দরবন' নামে প্রকাশিত। পরবর্তীকালে দে'জ ইতিহাস গ্রন্থমালায় সম্পাদনা করেছেন—যশোহর খুলনার ইতিহাস (২ খণ্ড), ঢাকার ইতিহাস (২ খণ্ড), বিক্রমপুর- রামপালের ইতিহাস, বৃহত্তর বাখরগঞ্জের ইতিহাস, সুবর্ণগ্রামের ইতিহাস, দার্জিলিঙের ইতিহাস, কোচবিহারের ইতিহাস, ফরিদপুরের ইতিহাস, নোয়াখালি ও সন্দ্বীপের ইতিহাস, রাজসাহীর ইতিহাস, মেদিনীপুরের ইতিহাস (৩ খণ্ড), চট্টগ্রামের ইতিহাস, মুর্শিদাবাদের ইতিহাস (২ খণ্ড)। সিপাহি বিদ্রোহের ১৫০ বছর, বঙ্গভঙ্গ ও সমকালীন বঙ্গসমাজ,বাঙ্গালার ইতিহাস (২ খণ্ড), সিলেটের ইতিহাস, নদীয়ার ইতিহাস, বীরভূমের ইতিহাস, সাঁওতাল বিদ্রোহ— সমাজ ও জীবন, বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (নগেন্দ্রনাথ বসু) সিরাজদ্দৌলা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়), বাঙ্গালার ইতিহাস- নবাবী আমল (কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়), মধ্যযুগে বাঙ্গালা (কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়), গৌড় রাজমালা (রমাপ্রসাদ চন্দ), উত্তরবঙ্গ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, গৌড় লেখমালা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়), অগ্রন্থিত অক্ষয়কুমার, এবং অন্যান্য গ্রন্থ। ‘গণ-আন্দোলনের ছয় দশক' নামে দুটি মূল্যবান গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন। আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার আরও কয়েকখানি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।