নিজের কবরে উৎকীর্ণ করার জন্য একটি সমাধিলিপি লিখেছিলেন সদত হসন মন্টো : ‘এখানে শুয়ে আছে সদত হসন মন্টো। তার সঙ্গে সঙ্গে গল্প লেখার শিল্প ও রহস্য কবরস্থ হয়েছে...টন টন মাটির নীচে শুয়ে সে ভাবছে, কে বড় গল্প- লেখক, খোদা, না সে। গল্প-লেখক হিসাবে মন্টো একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবেছেন আল্লাহকে। তাই ‘সভ্য’ সমাজের ভণ্ডামি ও ফাঁকা নৈতিকতাকে ফাঁসিয়ে দিতে একটুও তোয়াক্কা করেননি। গল্পের পর গল্পে জীবনের যে-অভিজ্ঞতা মন্টো লিপিবদ্ধ করেছেন, তা তাঁর পাঠককে আক্রমণ করেছে সমূহ নিষ্ঠুরতা ও কাহিনির অসহায়তা নিয়ে । পাঠক তার চারপাশের বাস্তবতাকে অন্যভাবে আবিষ্কার করেছে । দেশভাগ বা সমাজের নিচুতলার মানুষদের নিয়ে যাঁরা গল্প- উপন্যাস লিখেছেন, মন্টো তাঁদের সকলের চেয়ে স্বতন্ত্র। বেশ্যাদের জীবনের নিষ্ঠুরতা ও চাপ-কান্না, সম্ভবত, মন্টোর আগে আর কোনও ভারতীয় লেখকের রচনায় রক্তমাংসে ফুটে ওঠেনি। আবেগহীন, অথচ যন্ত্রণাবিদ্ধ দৃষ্টিতে মন্টো তাঁর সময়ের ঘটনাবলী ও মানুষগুলিকে দেখেছেন । মন্টো বাস্তববাদী লেখক, কিন্তু শুধু ঘটনার বর্ণনাতেই তাঁর গল্প আটকে থাকে না। চরিত্রগুলি মনস্তাত্ত্বিক ও আস্তিত্ত্বিক যে জটিলতা নিয়ে মন্টো গল্পে হাজির হয়, তা ভারতীয় সাহিত্যে খুবই কমই দেখা গেছে । এই সংগ্রহের পঁচিশটি গল্প, একটি নাটক, তিনটি প্রবন্ধ ও শ্যাম চাচাকে লেখা চিঠিতে মন্টোকে নতুন করে আবিষ্কারের প্রচেষ্টা ধরা রইল ।
রবিশংকর বল (১৯৬২ - ২০১৭) একজন প্রখ্যাত বাঙালি কথাসাহিত্যিক। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তাঁর দোজখনামা উপন্যাসটি একটি অসাধারণ সংযোজন। দীর্ঘ তিরিশ বছরের সাহিত্যজীবনে তিনি ১৫টির বেশি উপন্যাস ও ৫টি গল্পসংকলন রচনা করেছেন। তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি বরিশালে।