এটিটিউড ইজ এভরিথিং তথা মনোভাবের ওপর সবকিছু নির্ভর করে বইটি লেখা হয়েছে লেখক জেফ কেলারের একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে ওঠার সংগ্রাম নিয়ে। তিনি জীবনের শুরুতে একজন আইনজীবী ছিলেন। কিন্তু তিনি তার জীবনে কিছু একটা জিনিসের অভাব বোধ করতেন। তিনি এ অভাব বোধের অনুসন্ধান করতে গিয়েই নিজেকে আত্ম-উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের নানা বই পড়ে আরম্ভ করেন। সেখান থেকে নিজেকে চিনতে পারেন এবং নিজের সুখ খুঁজে নেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি পুরোদমে মোটিভেশনাল বক্তা হিসাবে কাজ করতে থাকেন। এ বইটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম, সাফল্যের সূত্রপাত হয় চিন্তায়। দ্বিতীয়, ভেবেচিন্তে কথা বলুন অর্থাৎ আপনার কথার দিকে নজর দিন। আর তৃতীয় ভাগ হচ্ছে আল্লাহ তাদের সাহায্য করে যারা কাজ করে। এ বইয়ের মূল কথা হচ্ছে আপনি যা করবেন বলে মনে করবেন তাকে বিশ^াস করতে হবে। আর আপনি যদি বিশ^াস করেন তবে আপনি যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারবেন। ইতিবাচক চিন্তা ও কল্পচোখে দেখার চেষ্টা করলে আপনি অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু আপনি যদি নেতিবাচক চিন্তাকে আপনার জীবনে আমন্ত্রণ জানান, তবে তা আপনার জীবনের সব ভালো সুযোগ ও সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করে দিবে। এ বইয়ের মূল বিষয়গুলো নিচে সংক্ষেপে দেওয়া হল : ১। মনোভাবের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, আপনার কাছে সবসময়ই নির্বাচন করার একটি সুযোগ থাকে। আর তা হচ্ছে আপনার মনোভাব। আপনি কীভাবে সেই খারাপ পরিস্থিতির বিপরীতে প্রতিক্রিয়া করবেন তা সবসময় আপনার সিদ্ধান্ত। এ ক্ষমতা আপনার হাতে। ২। নেতিবাচক চিন্তাকে আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন। আপনি বেশি বেশি ইতিবাচক চিন্তা করতে পারেন। আপনার উচিত আপনার ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে নেতিবাচক চিন্তার ওপর রাজত্ব করা। ৩। আপনার সাফল্যকে কল্পচোখে দেখুন। আপনি কী কী জিনিস অর্জন করতে চান অথভা আপনার লক্ষ্যের ব্যাপারে নির্দিষ্ট হোন। আপনার লক্ষ্যের ব্যাপারে একটি খাতায় বা কাগজে লিখে রাখুন। খালিঘর (ক্স) ব্যবহার করুন। যেগুলো অর্জন করবেন সেগুলোতে টিক চিহ্ন () দিন। ৪। লক্ষ্য অর্জন করার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হোন। নিজের কাছে নিজে কথা দিন। নিজের এই অঙ্গীকার রক্ষা করতে লেগে থাকুন। ‘যাই হোক না কেন আমি আমার লক্ষ্য অর্জনের প্রতি লেগে থাকব’ এমন মানসিকতা বজায় রাখুন। যেমন হতে পারে, আপনি প্রতিদিন ১ পৃষ্ঠা পড়বেন এবং ৫ লাইন লিখবেন বলে ঠিক করেছেন। নিজেকে বললেন, যাই হোক না কেন আমি প্রতিদিন ১ পৃষ্ঠা পড়ব এবং ৫ লাইন লিখব। ৫। আপনার সমস্যাসে কীভাবে সুযোগে পরিণত করবেন তা শিখুন। সমস্যা বা বাধাবিপত্তি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেয়। আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। ৬। কথার ওপর গুরুত্ব দিন। আপনার বলা প্রতিটি শব্দ আপনি যতটা চিন্তা করেন না কেন, তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। কথা বলার সময় শব্দ চয়ন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। কথার প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করবেন। ৭। যখনই কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘কেমন আছেন?’ আপনি উত্তর দিবেন, ‘অনেক ভালো আছি’ বা ‘খুব ভালো আছি’ অথবা ‘চমৎকার।’ কেবল কোনোরকম ভাবে বলবেন না, ‘ভালো আছি’ বা ‘এই আছি কোনোরকম।’ আমি যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন আছেন?’ আমি বলি, ‘অনেক ভালো আছি।’ এ কথা বলার পর আমার ভেতর খুশির এক আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। ৮। অভিযোগ করা বন্ধ করুন। এর পরিবর্তে আপনার আশীর্বাদগুলো গণনা করে দেখুন। এই অনুশীলনটি করলে আপনার জীবন ধারাই বদলে যাবে। ৯। আল্লাহ তাদের সাহায্য করে যারা কাজ করে। তাই একজন কর্মতৎপর ব্যক্তি হোন। ১০। আপনার জীবনে বেশি বেশি করে ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিদের যোগ করুন এবং নেতিবাচক লোকদের বিদায় দিন। আপনার মানসিক শান্তি বজায় রাখার দিকে নজর দিন। ১১। আপনার ভয়-ভীতির মুখোমুখি হোন। এ কাজটি একটু কঠিন কাজ। তারপরও চেষ্টা করুন। একটি কাগজে আপনি কী কী জিনিস করতে ভয় পান তা লিখুন। খালিঘর (ক্স) ব্যবহার করুন। যেগুলো অর্জন করবেন সেগুলোতে টিক চিহ্ন () দিন। এতে করে, আপনি সাধারণ বহু লোকের থেকে এগিয়ে যাবেন। ১২। আপনার স্বস্তিদায়ক বলয় থেকে বের হয়ে আসুন। প্রথম প্রথম আপনি হয়তো ব্যর্থ হবেন। এ ব্যর্থতাও গুরুত্বপূর্ণ। পড়ে গেলে, আবার উঠে দাঁড়ান। নিজেকে নিজে তুলে ধরুন। ব্যর্র্থতাকে পুনর্নিরীক্ষণ করুন, শিখুন এবং আবার যত দ্রুত সম্ভব কাজে নেমে পড়–ন। ধীরে ধীরে অগ্রগতি করতে করতে এগিয়ে যান। ১৩। জীবনের দীর্ঘ পথে উন্নতি করার একমাত্র চাবিকাঠি ধৈর্য ও অধ্যবসায়। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন, জীবন মানে কেবল তাড়াহুড়া নয়।