আলোচ্য বিষয়ের সারসংক্ষেপ ‘তাওবা’ মুসলিমদের অতি পরিচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও মহা কল্যাণময় একটি শব্দ। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- তাওবা কবুল হওয়ার শেষ সময় সম্পর্কে যে কথা প্রায় সকল মুসলিম জানে ও মানে তা কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense অনুযায়ী সঠিক নয়। ভুল কথাটি চালু হয়েছে একটি হাদীসের ‘গরগরা’ শব্দের ভুল ব্যাখ্যার কারণে। আর এর ফল স্বরূপ- ১. তাওবার কল্যাণে মুসলিম সমাজে যে সুখ, শান্তি ও প্রগতি উপস্থিত থাকার কথা ছিল তার কিছুই উপস্থিত নেই। ২. অসংখ্য মুসলিম চিরকাল জাহান্নামে থাকার আমলনামা নিয়ে পরকালে পাড়ি দিচ্ছে। কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense অনুযায়ী- তাওবা কবুল হওয়ার শেষ সময় হলো, মৃত্যু আসা বা ঘটার পূর্বের এমন সময় যখন ব্যক্তির জ্ঞান, বুদ্ধি ও শারীরিক শক্তি এমন পরিমাণ উপস্থিত আছে যে, সামনে আসা একটি গুনাহ/অপরাধমূলক কাজ সে সহজে করতে পারে। কিন্তু তাওবা করেছে বলে সে তা করছে না। তাই, তাওবা কবুল হওয়ার শেষ সময় থেকে মূল শিক্ষা হলো- মানুষকে তাওবার মাধ্যমে সকল কবীরা গুনাহ (বড়ো গুনাহ) মাফ করিয়ে নিয়ে কবীরা গুনাহ মুক্ত থেকে জীবন পরিচালনা করতে হবে। কারণ যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু এসে যেতে পারে। আর মৃত্যু উপস্থিত হলে তাওবা কবুল হবে না। পুস্তিকাটি মুসলিমদের তাওবা কবুল হওয়ার শেষ সময় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে এবং মুসলিম ও অমুসলিমদের দুনিয়া ও পরকালীন জীবন সুখময় করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।
Title
গবেষণা সিরিজ-৩৭ : তাওবা কবুল হওয়ার শেষ সময় প্রচলিত ধারণা ও সঠিক তথ্য
প্রফেসর ডা. মাে. মতিয়ার রহমানের জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামের এক ধার্মিক পরিবারে। নিজ গ্রামের মাদ্রাসায় তাঁর শিক্ষা জীবন আরম্ভ। ছয় বছর মাদ্রাসায় পড়ার পর তাঁকে ডুমুরিয়া হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে তিনি যথাক্রমে ডুমুরিয়া হাইস্কুল ও সরকারী বি.এল কলেজ, দৌলতপুর, খুলনা থেকে কৃতিত্বের সাথে এস. এস. সি. ও এইচ.এস.সি পাস করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে MBBS পাস করেন। দ্বিতীয় ও ফাইনাল প্রফেশনাল MBBS পরীক্ষায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১০ম স্থান অধিকার করেন। MBBS পাস করে তিনি সরকারী চাকুরীতে যােগ দেন এবং ১৯৭৯ সালে ইরাক সরকারের চাকুরী নিয়ে সেদেশে চলে যান। ৪ বছর ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারী বিভাগে চাকুরী করার পর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং ১৯৮৬ সালে গ্লাসগাে রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জনস থেকে জেনারেল সার্জারীতে FRCS ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে কনসালট্যান্ট হিসেবে যােগদান করেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রফেসর এবং সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ল্যাপারােসকোপ (Laparoscope) যন্ত্র দিয়ে একক হাতে। (Single Handed) পিত্তথলির পাথর (Gall Bladder Stone) অপারেশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ সার্জন (surgeon)। প্রফেসর ডা. মাে. মতিয়ার রহমান চিকিৎসক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি দীর্ঘ দুই দশক ধরে কুরআন গবেষক হিসেবে মৌলিক কাজ করে আসছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় হলাে- ইসলামের সে সকল মূল বিষয় যা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য এবং বর্তমান বিশ্বের মুসলিমদের জ্ঞান ও আমলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। ইতােমধ্যে তার লেখা ৩৯টি গবেষণাধর্মী পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। এসব পুস্তিকায় তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত জ্ঞানগত ভুল ধারণার সংস্কার করে কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense -এর আলােকে ইসলামের সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কাজ হলাে ‘আল কুরআন যুগের জ্ঞানের আলােকে অনুবাদ’। এ অনুবাদখানির সম্পাদনা পরিষদের নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন।