তিনজন তিন ভুবনের বাসিন্দা হলেও কালক্রমে তারা যেন নিজেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে একে অপরের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে। দুজন পুরুষের মাঝখানে একজন নারী দাঁড়িয়ে। বলতে হবে দু’জন পুরুষের পরোক্ষ যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে ঐ নারী। দু’জন পুরুষ দুই মতাদর্শের, তাদের পেশা ভিন্ন দিনযাপনের পদ্ধতি ভিন্ন তবুও একে অন্যের সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা পোষণ করে। তার কারণও ঐ নারী। তারা পরস্পরের নাম জেনেছে, একে অন্যের চরিত্রের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো, পুরোটা না জানলেও যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখের কিছু কথা জানা হয়েছে। তাদের মাঝখানে দাঁড়ানো নারী চরিত্রটিই এই আদানপ্রদানের মূলে। এটা তাদেরকে জব্দ করার বা ঈর্ষান্বিত করে তোলার কোনো কৌশল কিনা, তাজুল ভাবলেও ইমরান ভাবে কিনা, সে জানে না। তবে তাজুল ভাবলেও তা মুহূর্তের জন্য। এটাকে সে মোটেও গুরুত্ব দিতে চায় না। সে ভেবে নেয় নীলিমা এসব গল্পের ছলেই বলছে। এগুলো কথার কথা। এমনটি ভাবার পেছনেও কারণ আছে। কারণ জীবনটা তার কাছে একেবারে হেল হয়ে উঠেছে। এখন সে সুন্দর কিছু একটা ভাবতে চায়। নিজের ভালো লাগার কিছু। সেজন্যই তার নীলিমার কাছে আসা। নীলিমা একদিন তার মনে নীল রং ছড়িয়েছিল। তারুণ্যে সে সেই নীল রংয়ে স্বপ্ন বুনেছিল। স্বপ্নগুলো ডানা ছড়াতে পারেনি। অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। মনে কিন্তু তার রেষ থেকেই গেছে এবং সে তা পোষণ করে এসেছে। তার অসুখি দাম্পত্য জীবন তা পোষণে ইন্ধনও যোগিয়েছে। নীলিমা এখনো নীল। এই মধ্যবয়সে এসেও সে প্রাণবন্ত সজীব যেমনটি ছিল কলেজ জীবনে। নীলিমার রং পছন্দ। বয়স চল্লিশের কোঠা পার না হতেই সে বিধবা হয়েছে। বৈধব্যকে সে মেনে নিলেও সাদা থান নাকি কখনো পরেনি। তাজুল এ গল্প শোনে বলেছে : সাদা থানে তোমাকে মানাবেও না। নীলিমা মেনে নেয় না তাজুলের কথা। সে বলে : পরলে ঠিকই মানাবে। আমার মা বলতেন, আমাকে সব রংয়েই মানায়। আমার স্বামী আমার জন্য নির্ধারণ করেছিল নীল রং। সে শুধু নীল রং পোষাক কিনত আমার জন্য। ম্যাক্সি বলো, শাড়ি বলো, থ্রি পিস বা নাইটি সবই আমার নীল ছিল, ও বেঁচে থাকতে। কিন্তু তুমি মনে করে দেখো, কলেজে পড়ার সময় আমি মা’র লাল নীল বেগুনি সবুজ পাড় সাদা শাড়িগুলো পরে যেতাম। ছেলেমেয়েরা আমাকে ‘সাক্ষাৎ প্রতীমা’ বলত। তাজুল আনমনে বলে : মনে আছে। তোমার সবই আমার মনে আছে। নীলিমা বলে : থ্যাঙ্কস। মনে রাখার জন্য। : তোমার স্বামী বুঝি তোমাকে খুব ভালোবাসতেন? : ও কথা কেন জানতে চাও? নীলিমা বলে। : ভালোবাসার রং নীল। ভালোবাসার মানুষকে নীল রং দিতে হয়। তাই জানতে চাইলাম তোমাদের ভালোবাসা কতটা ছিল!