৭৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী তরুণ লেখক তাদের ছোটবেলা সম্পর্কে লিখেছে, ৭৭টি রঙিন ঘুড়ি মুক্ত আকাশে উড়ছে। যারাই এটি পাঠ করবেন তারা কোনো না কোনো জায়গায় নিজের শৈশবের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মৃদু হাসি ফুটে উঠতে দেখবেন, স্মৃতির মাধুর্য মন ছুঁয়ে যাবে। আর এই তরুণ লেখকেরাও নিজেদের পরিণত বয়সে এগুলি পাঠ করে পাবেন প্রভূত আনন্দ। তাছাড়া বাল্যস্মৃতি পাঠের বা স্মৃতি চারণের মাধ্যমে পুনঃপুন মানুষ নিজেকে পরিশোধিত করতে পারে। এ এক মহৎ ও চিরন্তন মানসিক বলবর্ধক কাজ। রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের শিশুতোষ রচনাগুলি চিরায়ত বাল্যকালের পরিচয়বাহী এবং চিরন্তন আনন্দের আকর। শৈশব-কৈশোর নিয়ে লিখতে গিয়ে তারা এসব সাহিত্যের সাথে পরিচিত হবে। দেখতে পাবে, অপু-দূর্গা (পথের পাঁচালী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়), পেশকভ (আমার ছেলেবেলা, মাক্সিম গোর্কি) বা এমন আরও কারও কারও সাথে তাদের শিশু-কিশোরকালের মিল-অমিল। পরিবার, সমাজ, ভাষা, জাতি ও সময়ের পার্থক্য অতিক্রম করে একটি চিরকালের বাল্যকাল আবিষ্কার করে আনন্দিত হবে। সেসবের সাথে নিজেদের আনন্দ বেদনার তুলনা করে নিজেদের ব্যক্তিত্ত¡ পুনর্গঠনের মিথষ্ক্রিয়ায় লিপ্ত হবে। এইভাবে পরশপাথর-স্বরূপ মহৎ ব্যক্তিত্তে¡র ছোঁয়ায় নিজেদের জীবনের সাফল্যকে আবিষ্কার করতে শিখবে। কোনো কিছু লেখার সময় পূর্বদৃষ্টান্ত খুব কাজে লাগে। অনুসরণ, অনুকরণ, অনুবাদ, আত্তীকরণ, ছায়া অবলম্বন বা প্রভাবিত হয়ে লেখা মক্্শ করতে করতে লেখার মান উন্নত করা যায়। লেখা শুরুর প্রথমদিকে এমন থাকলে তার ঋণ স্বীকার করতে হবে। কিন্তু আত্মসাৎ করা ঠিক নয়। লেখক হওয়ার মানসে পূর্বদৃষ্টান্ত পাঠ ও পর্যালোচনার মূল কারণ সেসব বিখ্যাত শিল্পসাহিত্যের মহত্ত¡কে ধারণ করে তাকে অতিক্রম করতে চেষ্টা করা। প্রথম দিকে এটা কঠিন, পরেও কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। চেষ্টা করতে হবে যেন তাদের মতো না হয়ে যায়। অভিনব যদি না-ই হলো তবে নতুন শিল্পসাহিত্য কীভাবে হবে? ভাবে, ভাষায়, ভঙ্গিতে, রীতিতে, শৈলীতে অভিনবত্ব অর্জনের চেষ্টা থেকে জন্ম নেয় লেখকের নিজস্ব রীতি তথা স্বকীয়তা। এটাই হচ্ছে লেখকী। লেখকবৃত্তির সারমর্মও এটাই। এ গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তরুণ লেখকেরা সঠিক বানান ও বাক্য লেখার জন্য অভিধান ঘাটা, সুন্দর বাক্য লেখার জন্য ভালো সাহিত্যের মধ্যে নমুনা অন্বেষণ, বানান ও বাক্য সংশোধন, প্রুফ দেখা, পাণ্ডুলিপি তৈরি করা, সম্পাদনা করা, প্রকাশনা ইত্যাদি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা পাবে ― যা ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক ভাষা শিক্ষার অন্যতম অনুষঙ্গ। আমি আশা করি, ঘুড্ডি নামের এই গ্রন্থপ্রয়াস তরুণ ছাত্রছাত্রী ও লেখকদের বর্ণালী ও সফল জীবনের ঘুড্ডি হিসেবে কাজ করবে। শৈশব-কৈশোর চর্চার মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিত্তে¡র পুনর্গঠনে ও ভাষা শিক্ষায় এ গ্রন্থটি একটি জরুরি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে বলেই আমি মনে করি। -আফজালুল বাসার
আফজালুল বাসার ২৪-০৭-১৯৫৭ তারিখে সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুস সােবহান এবং মাতার নাম মােসাম্মৎ রাহিলাতুন্নেসা। তিনি ১৯৮১ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন ইত্যাদি তাঁর গবেষণা ও লেখাপড়ার এলাকা। সাম্প্রতিক সাহিত্যতত্ত্ব চর্চায় তিনি একজন। অগ্রপথিক। তাঁর মৌলিক প্রবন্ধ গ্রন্থাবলি: বাঙলা সাহিত্য। সমালােচনা (১৯৯৩), অক্ষর পুরুষ (২০০২), বাঙালির স্বদেশ ও সংস্কৃতির অনুশিলন (২০০২), নজরুল ইসলামের সাহিত্য ভাবনা (২০০২), জহির রায়হান: এক বর্ণাঢ্য মুহূর্তের নায়ক (২০১২), বাঙালির অক্ষর, ভাব ও স্বভাব (২০১৩)। তাঁর সম্পাদিত পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থাবলি: অস্বীকার (৫টি সংখ্যা, ১৯৭৭-৭৯), আজমল স্মরণী (১৯৭৮), বিদায় স্মরণী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচ কোর্স পদ্ধতির ছাত্র ছাত্রীদের বিদায় স্মরণে, ১৯৮১), আহমদ শরীফ স্মারক গ্রন্থ (২০০১), অধ্যাপক আহমদ শরীফ শ্রদ্ধাঞ্জলি (২০০১), অধ্যাপক আহমদ শরীফ সাক্ষাৎকারে সমকাল (২০০২), স্বদেশচিন্তর মুখপত্র (২০০২), ট্রাকটেটাস ও ভিটগেনস্টাইনের ভাষাচিন্তা (২০০৩)। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ: কমিউনিজমের Gallo (Principles of Communism by f. Engels, 1986], নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবন, (Introducing Nazrul Islam by Serajul Islam Chowdhury : 1986, 2001], শিল্পকলা ও সমাজজীবন [Art and Social Life by G. V. Plekhanov, 1988, 2013], বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব। [Selected Essays on Mordern literary Theory by Western Writers : 1991, 2003], ভিটগেনষ্টাইনের ট্রাকটেটাস [Tractatus Logico-Philosophicus by L. Wittgenstein, 2001) কাব্যগ্রন্থ : নিম্নস্বরের কবিতা (২০১১), লিফট সিরিজ (২০১১), রঙিন পুতুল (২০১৩)। ছড়া ও গান : আহসানের ছড়া ও গান (২০১৩)।