"ছায়ামৃত্যু" বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা নিদিয়া বেড়াতে এসেছে কুমিল্লার খন্দকার বাড়িতে। বাড়িটি তার বাবা নতুন কিনেছে। বাড়িতে প্রবেশের পরই তার ওপর ভর করে খন্দকার, যার নাকি ছায়ামৃত্যু হয়েছিল। চল্লিশ বছর ধরে সে অপেক্ষা করছিল নিদিয়ার জন্য। কারণ নিদিয়ার চেহারা আর তার স্ত্রী লায়লার চেহারা হুবহু একইরকম। প্রথমে বিশ্বাস করেনি নিদিয়া। কিন্তু যখন ভূগর্ভস্থ কক্ষে লায়লার ছবি পাওয়া গেল তখন আর সত্যতা নিয়ে কোনাে প্রশ্ন থাকল না, কারণ দুজনের চেহারায় কোনাে পার্থক্য নেই। নিদিয়া সিদ্ধান্ত নিল ত্যাগ করবে খন্দকার বাড়ি। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। খন্দকারের আত্মা অবস্থান নিয়েছে তার শরীরে। নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে তাকে, এখন তাকে স্ত্রী হিসেবে পেতে চায়। কিন্তু নিদিয়া রাজি নয়। কারণ সে ভালােবাসে রােমেলকে। রােমেলের কথা জানতে পেরে খেপে ওঠে খন্দকার। সিদ্ধান্ত নেয় হত্যা করবে রােমেলকে। নিদিয়াকে খন্দকারের আত্মা থেকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসে কালু ফকির। কিন্তু তার সমস্ত প্রচেষ্টা একে একে ব্যর্থ হতে থাকে। এক সময় নির্জন বাড়িতে নিদিয়াকে একা বন্দি করে ফেলে খন্দকার। এখন আর কেউ নেই তাকে সাহায্য করার। নিদিয়াকে খন্দকারের বাধ্য এখন হতেই হবে, স্ত্রী হিসেবে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে খন্দকারের চাওয়া-পাওয়ার কাছে। তা না হলে নিশ্চিত মৃত্যু? শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল নিদিয়ার ভাগ্যে? সে কি ফিরে আসতে পেরেছিল স্বাভাবিক জীবনে? নাকি বরণ করতে হয়েছিল করুণ মৃত্যু?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।