"আমি এবং রুমী" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ শামস-ই-তাবরিজী সুফিবাদের রহস্য পুরুষ। শামসের জীবনের লক্ষ্য ছিল সকল নিয়ম রীতির উর্ধ্বে ওঠে আত্মােপলব্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। জালালুদ্দীন রুমীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর উভয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা গভীর আত্মিক সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী হলেও তা ছিল রুমীর জীবনকে বদলে দেওয়ার সূচক। সুফিবাদ নিয়ে গবেষণাকারীরা সকলেই স্বীকার করেন যে, রুমীর জীবনে শামসের আবির্ভাব না হলে তাঁর কাব্য প্রতিভার বিকাশ ঘটত না। “আমি এবং রুমী” শামস-ই-তাবরিজী’র লেখা বা তার উচ্চারিত কথাগুলাের সংকলন, যা “মাকালাত” বা “সংলাপ” নামে খ্যাত। রুমীর কবিতায় শামস-এর কথা বার বার এসেছে, যিনি এক মহান বিদ্বজন, ব্যতিক্রমী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, কবি এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষক। রুমীই শামসকে কল্পতুল্য বাতাবরণ দিয়েছেন। এমনকি রুমীর আধ্যাত্মিক মহাকাব্য ‘মসনবী’র চেয়ে তাঁর ‘দিওয়ান-ই শামস-ই তাবরিজি’ অধিক জনপ্রিয়। শামস এর জীবন কাহিনি জানার জন্য প্রয়ােজন তার “মাকালাত” এ প্রবেশ করা। শামস যখন কোনিয়ায় আসেন তখন তার বয়স ষাট বছর এবং রুমীর বয়স সাইত্রিশ বছর। রুমীর জন্য এটি ছিল প্রথম দর্শনেই প্রেম। তিনি শামস এর প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। তাদের নিবিড় সম্পর্ক রুমীর ভক্তদের মধ্যে ঈর্ষার সৃষ্টি করে এবং শামস কোনিয়া ছেড়ে চলে যান। রুমী পুরােপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যান এবং তার মধ্যে বিরাট এক রূপান্তর ঘটে, যা তাকে ফারসি ভাষার সবচেয়ে সেরা কবিতে পরিণত করে। অনেকে মনে করেন শামস সম্ভবত রুমীকে এ কারণে ছেড়ে যান যে, তিনি সিদ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর দগ্ধ হওয়া প্রয়ােজন। শামস ও রুমী উভয়ের মতে জ্ঞান অর্জনের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর পথ অনুসন্ধান করা, যিনি নিরঙ্কুশ ও প্রকৃত সত্য। “মাকালাত” এর বিবরণীতে অনেক প্রশ্নের ওপর আলােকপাত করা হয়েছে, যেগুলাে রুমী ও শামস সম্পর্কে বহু শতাব্দী ধরে প্রশ্ন করা হচ্ছে। শামস-এর আত্মজীবনী গ্রন্থিত করার প্রয়াস সুনির্দিষ্ট কোনাে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য নয়, বরং এমন এক ব্যক্তিত্বের কাছে তুলনামূলকভাবে সরাসরি পৌছার সুযােগ করে দেওয়ার জন্য, যার মহত্ত্ব রুমীর জীবনকেও উন্মুক্ত করেছে। পাঠকরা আত্মােন্নয়নের খােরাক পাবেন বলে বিশ্বাস করি।