প্রথম দক্ষিণের এই বারান্দাটার কথা বলতে হয়। বারান্দাটা শুরু হয়েছে পূর্ব দিকের এক চিলতে অংশ থেকে, তারপর পুরো দক্ষিণ দিকটা নিজের বাহু দিয়ে ঘিরে উত্তরদিকের রান্নাঘরে শেষ হয়েছে অর্ধ-বৃত্তাকারে। জ্যামিতিক অর্থে বারান্দাটাকে অর্ধ-বৃত্তাকার বলা যাবে না-বলতে হলে বৃত্তের আদলটা বদলে ফেলতে হয় আর সেটা বোধ হয় সম্ভব নয়। তবু, সাহিত্যিক ভাষায় বারান্দাটির বর্ণনা দিতে হলে অন্তত এই মুহূর্তে আর কোনোভাবে আমি তা করতে পারছি না। দক্ষিণদিকের এই বারান্দাটার আর একটা সুবিধা এই যে, সামনে আর কোনো ঘরবাড়ি নেই, দক্ষিণদিকের বিখ্যাত হাওয়াটা পুরোই পাওয়া যায়। অন্য কোনো লেখক হলে বলে দিতে পারতেন, সামনে ঠিক কতোটা জমি খালি পড়ে আছে; কিন্তু শুধু চোখে দেখে জমির মাপজোক আমি কিছুই বুঝতে পারি না। তবে অনুমান করি, ঐ খালি জমিতে দুটি প্রকাণ্ড সাইজের ম্যানসন সহজেই তোলা যায় এবং একদিন নিশ্চয়ই হবে। সেদিন এই বারান্দার আকর্ষণ অনেক কমে যাবে। আপাতত মস্ত সুবিধা এই একেবারে সামনে ঘরবাড়ি নেই। আবার শুরু হয়েছে মাঝখানে অনেকটা জায়গা ফাঁকা রেখে, সেগুলো আবার পরপর চারটি একতলা ঘর, দেয়াল আর মেঝে ইট-চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি, ছাদ টিনের। ঘরগুলোতে ইলেকট্রিক, গ্যাস, পানি সবই আছে, মাসিক ভাড়া চারশ' টাকা, দেখতে ছবির মতো। ভাড়া বেশ কমই বলতে হবে। যদিও কামরা একটিই কিন্তু লাগোয়া বাথরুম,
জন্ম : কলকাতা, ১৪ আগস্ট ১৯২৫। শিক্ষা : সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজ, কলকাতা। পেশা : চাকরি। জেনারেল ম্যানেজার (অবসরপ্রাপ্ত), মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। প্রকাশিত গ্রন্থ : উপন্যাস : উত্তম পুরুষ; আমার যত গ্লানি; প্রসন্ন পাষাণ; প্রেম একটি লাল গােলাপ; সাধারণ লােকের কাহিনী; একালের রূপকথা; শ্যামা; বড়ই নিঃসঙ্গ; মায়ের কাছে। যাচ্ছি; চিনি না; পদতলে রক্ত; লাঞ্চ বক্স । গল্প : প্রথম প্রেম। প্রবন্ধ : আর এক দৃষ্টিকোণ; অতীত হয় নৃতন পুনরায়; মনের গহনে তােমার মুরতিখানি।। স্মৃতিকথা : জীবন-মরণ । পুরস্কার : আদমজী পুরস্কার (১৯৬১); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭২); একুশে পদক (১৯৮৪); লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯১); জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা (২০০১); কাজী। মাহবুবউল্লাহ-জেবুন্নেসা ট্রাস্ট পুরস্কার (২০০২)। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি সওগাত, মােহাম্মদী, পূর্বাশা, নবযুগ, মিল্লাত প্রভৃতি পত্রিকায় গল্প লিখে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই সময় তিনি অল-ইন্ডিয়া রেডিও’র কলকাতা। কেন্দ্র থেকে নিয়মিত গল্প ও কথিকা প্রচার করতেন । ১৯৪৫ সালের দিকে এসে লেখালেখি ছেড়ে দেন এবং ১৯৬১ সালে পুনরায় শুরু করেন। প্রথম উপন্যাস 'উত্তম পুরুষ লিখেই আদমজী। পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে আমার যত গ্লানি (১৯৭৩) উপন্যাস রচনা করেন । লিখেছেন অনেক তাৎপর্যময় প্রবন্ধ এবং স্মরণীয় গুটিকয় গল্প । ১৯৯২ সাল থেকে অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দি জীবনযাপন করছেন। আবার রুদ্ধ হয়ে গেছে তার ক্ষুরধার কলম।