"বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনক আমার নেতা আমার"বইটির ভূমিকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার পিতা ছিলেন বিশ্বের শােষিত ও বঞ্চিত মানুষের নেতা। বিশ্ব মানবতার নেতা। তার জীবন ও কর্মের প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে। সংগ্রামের ইতিহাস। সত্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য জাতির পিতা তার নিজের জীবনের ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করেছেন। ১৩ বছরেরও বেশি সময় জেল খেটেছেন। মৃত্যুর মুখে দাড়িয়েও তিনি বলেছেন, | “আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান; বাঙালিরা একবারই মরতে জানে।” জাতির পিতা আমাদের দিয়েছেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচবার অধিকার। আজ যে পদ-পদবি ব্যবহার করে আমরা গর্বিত হই তা সম্ভব হয়েছে আমরা স্বাধীন জাতি বলে। আব্বা তার জীবনের সব থেকে সুন্দর সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তার অবর্তমানে আমার মা ফজিলাতুন্নেছা, মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করাসহ দলকে সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেন, প্রতিটি কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মা উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন নেপথ্যে থেকে। তার স্মরণশক্তি প্রখর ছিল, আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় আব্বাকে জানাতেন এবং প্রয়ােজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। পুলিশ ও গােয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দিতেন। আওয়ামী লীগের কার্যকরী সংসদের সভা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে চলাকালে নিজের হাতে রান্নাবান্না করতেন এবং তাদের খাদ্য পরিবেশন করতেন। এ সংগঠনের জন্য মা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ সালের রাত একটার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি আক্রমণ করে প্রচণ্ড গােলাগুলি চালায় এবং পরদিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় আবার আমাদের বাড়ি আক্রমণ করে। শেখ জামাল ও রাসেলকে নিয়ে আমার মা বেগম মুজিব ওই বাড়িতেই ছিলেন। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেখ কামাল ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ রাতে ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় প্রতিরােধ গড়ে তুলতে চলে যায়। পিতার গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদ পেয়ে কামাল কাফুর ভেতরেই গেরিলা কায়দায় ৫০টি বাড়ির দেয়াল টপকে সন্ধ্যায় মাকে দেখতে আসে। বাড়ি আক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেয়াল টপকে সন্তানদের নিয়ে আমাদের মা পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। দিনের পর দিন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লুকিয়ে লুকিয়ে দিন কাটান। অবশেষে হানাদার বাহিনী মাকে মগবাজারের একটা বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রােডের একটা বাড়িতে এনে বন্দি করে রাখে। বন্দি অবস্থায় ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অনেক মানসিক যন্ত্রণা ও অত্যাচার ভােগ করেন। জনক আমার নেতা আমার শেখ মুজিব আমার পিতা, পিতাকে ফিরে পেলাম, বঙ্গবন্ধু ও তার সেনাবাহিনী, ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বায়ান্ন, একাত্তর, আওয়ামী লীগ ভালােবাসি মাতৃভাষা, সংগ্রামে আন্দোলনে গৌরবগাথায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র ৬-দফা, আগরতলা মামলা ও রিপাের্ট বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক কর্তৃক দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা-এর ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গােয়েন্দা সংস্থার রিপাের্ট ১৯৪৮-১৯৭১-এর ভূমিকা লেখক বঙ্গবন্ধু : তিনটি বইয়ের ভূমিকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লেখা কারাগারের রােজনামচা-এর ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লেখা আমার দেখা নয়াচীন-এর ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, সাক্ষাঙ্কার ও অন্যান্য রচনা ভাইয়েরা আমার, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ রাজনীতির মহাকাব্য, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, এক অবিস্মরণীয় দিন, ১৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চের পটভূমি, বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-১৯৭৫, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাষণসমগ্র ১৯৫৫-১৯৭৫-এর ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাক্ষাৎকার ১৯৭০-১৯৭৫-এর ভূমিকা আমার কথা স্কুল জীবনের কিছু স্মৃতিকথা, পত্রিকা পড়ার গল্প , একানব্বইয়ে ডায়েরি, আমি মা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পরিবার স্মৃতির দখিন দুয়ার, স্মৃতি বড়াে মধুর, স্মৃতি বড়াে বেদনার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, রাসেল, রাসেল তুমি কোথায়। আমার লেখায় ঘুরেফিরে বারবার আব্বার কথা, আমার মা ও আমাদের পরিবারের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা ও বাংলাদেশের কথাই এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জনক আমার নেতা আমার’ গ্রন্থ পাঠে লেখক, গবেষক, রাজনীতিবীদ এবং আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক অজানা কথা। প্রবন্ধগুলাে বিভিন্ন গ্রন্থে ও পত্রিকায় ভিন্নভিন্ন। উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি লেখা বিভিন্ন বইয়ের ভূমিকা হিসেবে মুদ্রিত হয়েছে। যেমন : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন, ভাষণসমগ্র ১৯৫৫-১৯৭৫, জয় বাংলা সাক্ষাৎকার ১৯৭০-১৯৭৫, আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম, বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ রাজনীতির মহাকাব্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, SECRET DOCUMENTS OF INTELLIGENCE BRANCH ON FATHER OF THE NATION BANGABANDHU SHEKH MUJIBUR RAHMAN, RECORD OF PROCEEDINGS THE AGARTALA CONSPIRACY CASE I যেহেতু লেখাগুলাে জাতির পিতা শেখ মুজিবকে নিয়েই রচিত তাই একত্র করে গ্রন্থে সংকলিত করা হলাে। বর্তমান গ্রন্থটি প্রকাশের আগে ছােটোখাটো কিছু সম্পাদনা করতে হলাে মূল ঠিক রেখে । আশা করি পাঠকগণ তা সহজেই বুঝতে পারবেন। | ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জনক আমার নেতা আমার’ বইটি প্রকাশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পাদনায় সহযােগিতা করেছেন লেখক, রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। বইটি সুচারুরূপে প্রকাশের জন্য প্রকাশক হুমায়ুন কবীরকে জানাই ধন্যবাদ। বইটির প্রচ্ছদ অঙ্গসজ্জার জন্য শিল্পী ধ্রুব এষ ও স্থপতি ও শিল্পী মুস্তাফা খালীদ পলাশ-কে ধন্যবাদ জানাই। | হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মে ছিলেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি আর তারই জন্মশতবর্ষে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।