অপূর্ণ সরকারের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাই ছিলেন। কিন্তু মায়ের ইচ্ছা ও তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চন্দ্র শেখর স্যারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করে প্রকৃত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে মহান পেশা শিক্ষকতা শুরু করেন সরকারি কলেজে। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখতে পান পড়ানো আর পরীক্ষা নেয়া ছাড়া তার আর তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। সহকর্মী যার সাথেই তার মানুষবোধ জাগরণের কথা বলেন,দেখেন তারা সবাই বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত হতে হতে হতাশা গ্রস্ত।পড়ানো আর পরীক্ষা নেয়া ছাড়া যেন তাদের আর কাজ নেই, নেই শিক্ষকের স্বপ্নের মুক্তি! শিক্ষকতা পেশায় আসার কারণে ভালোবাসার মানুষটিও দূরে সরে গেলেন এ পেশাকে কম দামি জীবন মনে করে। এরই মাঝে একদিন নিজের ছাত্রই মল-মূত্র মিশ্রিত ময়লা পানির বালতি তার মাথায় ঢেলে দিল। লজ্জায় আর হতাশায় অপূর্ণ স্বপ্নেও মৃত্যু দৃশ্য দেখেন এ ঘটনার পরে। এভাবে চরম অপমানে শিক্ষক মুখ লুকিয়ে চলে, ফলে নিভে যায় জাতির আলো, আর ডুবে যায় শিক্ষকের আশার আলো। মূল্যবোধ সংকটে ভুগে সমাজ। সমাজের চোখে শিক্ষক হয় দণ্ডিত, কেননা সমাজ তো ভেতরের সিস্টেম জানে না,কীভাবে শিক্ষককে অকর্মা বানিয়ে রাখা হচ্ছে। শত কষ্ট বুকে নিয়েও অপূর্ণ স্বপ্ন দেখে মানুষ চরিত্রের মানুষ গড়ার। কিন্তু তিনি দেখতে পায়, কৃষক, শিল্পীসহ সকল নির্মাতারাই সূর্যের মতো পুড়ে পুড়ে সমাজে আলো বিলিয়ে দিচ্ছে, অথচ বিদায় বেলাতেও মানুষ তাদের অবদান স্বীকার করতে চায় না। ছোট বেলায় বাবাকে হারানো অপূর্ণ মায়ের সংগ্রামী জীবনের কষ্টে ব্যথিত হয়েও মায়ের আশা পূরণ করতে পারেনি। শেষ বয়সে মায়ের একটাই ইচ্ছা ছিল ছেলের বউ দেখে যাওয়া। কিন্তু করোনা মহামারিতে মাকে হারায়ে অপূর্ণ মনে করে, শিক্ষকতার জন্যই প্রেমিকা হারালো, মায়ের ইচ্ছাও তাই পূরণ করতে পারেনি। মায়ের দাফন শেষে নদীর ওপারে তাকিয়ে দেখে বিকেলের সূর্য ডুবি ডুবি অবস্থা, আর মানুষের গা শীতল করার জমায়েত। পৃথিবীতে তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ ও শান্তির আশ্রয় মাকে হারিয়ে, সর্বত্র নির্মাতাদের যন্ত্রণা ও চোখের আলোর চোখের জ্বলে ডুবে যাওয়া দেখে, গোধূলির সূর্য ডুবিতে উল্লসিত জনতার এ দৃশ্যে অপূর্ণের আহত মন আক্ষেপ প্রকাশ করে এ জাতি ও সমাজের প্রতি, আহারে মানুষ! তোমরা সূর্য ডুবি দেখ, অথচ এর আড়ালে আলোর ডুব দেখ না!