"অলীকালোকে" বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা মীরুর ছবি মীরু ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এসেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে। বাবা রাশেদ মির্জা। মা আলেয়া সুলতানা। গ্রামের বাড়িতে দাদি জিঞ্জিরা বানু। জিঞ্জিরা বানুর ছােট ছেলের মেয়ে ইভেত। মীরু মানুষের নগ্ন ছবি আঁকে। ফরাসী দেশে যার চর্চা ব্যাপক এবং প্রাচীন। ইভেতদের বাসায় কাজের মেয়ে কুলফিকে বেছে নেয় ন্যুড ছবি আঁকার মডেল হিসেবে। কষ্ট পায় ইভেত। কয়েকদিন পরে ইভেত, মীরুরা বেড়াতে যায় সুরমাদের বাড়ি। সুরমার দাদার বড় বােন জিঞ্জিরা বানু। সুরমা বিজ্ঞানের ছাত্রী কিন্তু আবেগমধুরতায় ভরা এক মেয়ে। সেই বাড়িতেও দুজনকে এক সঙ্গে দেখে কষ্ট পায় ইভেত। তারপর একদিন মীরুর ঘরে একটা লাল চাদরের নিচে শুয়ে আছে ইভেত। মীরুর আজকের ছবির মডেল। বিয়ের পর ছবিটা রাখা হবে শােবার ঘরে। নিঃশব্দ নির্মল আর নিপুণ প্রেমের ছােট্ট উপন্যাস ‘মীরুর ছবি'। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অভিনব দক্ষতায় উপন্যাসিক নীলা হারুন দুটি মানুষের মধ্যে দিয়ে অনেক মানুষের হাহাকার, সুখ-দুঃখ, কালের ইতিহাস ও জলের সরােবর থেকে মুক্তোর মতাে তুলে এনেছেন, যা একমাত্র হৃদয়বান লেখকের পক্ষেই সম্ভব।
এই জীবনে এই জীবনে, আসলে কোন জীবনে? জীবন কী একটা? প্রকৃতপক্ষে একটা জীবনের মধ্যে অনেক জীবনের আধার লুকিয়ে থাকে। এই জীবনে ছােট্ট উপন্যাসের ক্যানভাসে উপন্যাসিক নীলা হারুন একটি অভিমানী কিন্তু পরম সংবেদনশীল মেয়ের ঘটনা লিখেছেন। সঙ্গে চারপাশের জটিল কুটিল আর মাংসাশী পুরুষের মুখােশ খুলে দিয়েছেন। প্রধান চরিত্র জর্দ্দা। জর্দ্দার বাবা মনে করে মেয়েটি পাগল বা অস্বাভাবিক। কারণ, মেয়েটি রাতে ঘুম না পেলে উঠানে হেঁটে বেড়ায়। চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় তান্ত্রিক ঋক্ষরাজ হালদারের কাছে। একলা ঘরে তান্ত্রিক বলল, তােমার মুখটা খুব সুন্দর। স্পর্শ করতে চাইল। মেয়েটি চড় মারল। বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে। ভাইবােন নিয়ে জর্দ্দা অকূলে। ঘরে খাবার নেই। গভীর রাতে লুকানাে বিস্কুট খেতে দেয় ছােটবােনকে। আহারে মুঠোবন্দী জীবন! মেয়েটির জীবনেও প্রেম আসে। জর্দ্দার বর্ণনায়, গ্রীক রূপকথার চরিত্র অমিয়। একই কলেজে পড়ে, দেখা হয়েছে, কখনাে কথা হয়নি। সেই অমিয় এলাে বাড়িতে, বলল বিয়ে করব। কলেজে যাওয়া বন্ধ হলাে। জর্দ্দার বাড়িতে উৎসব। বিয়ে হচ্ছে জর্দ্দার। পাত্র লন্ডনের। এই সময়ে আবার এলাে অমিয় । সাথে ওর বাবা। অমিয়র অনুরােধে জর্দ্দা বাইরে এসে দেখতে পায় গাড়িতে বসে আছে সেই ঋক্ষরাজ হালদার। কী করার থাকে অমরাবতী মেয়ে জর্দ্দার, নির্মম ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া? হ্যা অমিয়কে ফিরিয়ে দিয়েছিল জর্দ্দা। কিন্তু পরে ছােট্ট একটা পরিশিষ্ট আছে। পাঠকদের পড়ে নেয়ার অনুরােধ জানাই...। ছােট ছােট কষ্ট কখন যে চেতনার গভীরে বিম্বিসার সমুদ্র হয়ে যায়, সুখী সুখী মানুষগুলাে কখন যে পুতুল হয়ে যায়, মানুষও বােঝে না, পুতুলও নাচে না। একই মলাটের মধ্যে দুটি উপন্যাসের আখ্যানে নীলা হারুন দারুণ চমক দেখিয়েছেন। নিবিড় শব্দ বয়নে এবং অপ্রকাশের ভাব প্রকাশের সূক্ষ্ম কারুকাজে।
জন্মঃ ২৩ অক্টোবর, ১৯৯৪ইং পিতাঃ মাে: হারুনুর রশিদ তালুকদার মাতাঃ রাশিদা আক্তার পূর্বপূরুষের নিবাস চাঁদপুর জেলায় হলেও চার ভাইবােনের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ লেখকের জন্ম এবং বেড়ে উঠা সিলেটের মায়াবী পরিবেশে। সিলেটের মাটির প্রতি তার অন্যরকম ভালােবাসা আছে। ছাপার অক্ষরে একাধিক পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হলেও অলীকালােকে তার প্রথম প্রকাশিত সম্পূর্ণ একক বই। এই বইয়ের সকল ঘটনাই কাল্পনিক, তাই কাল্পনিক জগত বােঝাতে বইটির এমন নামকরণ করেছেন তিনি। তার লেখা গল্পে ভারতের আসামে ‘মিসটেক' নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যেটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সমাদৃত হয়েছে। ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বর্তমানে ঢাকা সিটি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষে তিনি অধ্যয়ণরত।