নেপোলিয়ন হিল ও ডব্লিউ ক্লেমেন্ট স্টোন রচিত বই “সাকসেস থ্রো এ পজিটিভ মেন্টাল এটিচিউড”—বইটি প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়ে যায়। একসময় বইটি ক্ল্যাসিক—এর মর্যাদা পেয়ে যায়। প্রথম প্রকাশের পর থেকে আজ পর্যন্ত বইটি একইভাবে প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন। বইটিতে কিছু মানুষের অর্জিত বিস্ময়কর সাফল্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই মানুষদের মধ্যে রয়েছেন হেনরি ফোর্ড, যিনি ইতিবাচক মনোভাবের সাহায্যে সফলতা পেয়ে গোটা পৃথিবীকেই প্রায় বদলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। রয়েছেন উড়োজাহাজের উদ্ভাবক রাইট ভ্রাতৃদ্বয়— যাঁরা বহু মানুষের ব্যর্থতার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে ইতিবাচক মনোভাবের ব্যবহার করে অভাবনীয় সাফল্যের দেখা পেয়েছিলেন। অনেকের ধারণা, ‘সাফল্য’ এক রহস্যময়তায় ঘেরা বিষয়— আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু উপাদানের সম্মিলনে কারও কারও জীবনে এই ‘সাফল্য’ ধরা দেয়। আবার অনেকে মনে করেন, সঠিক মানুষের দেখা পেলে আর সঠিক মুহূর্তের যুগলমিলনে সাফল্যের সোনার কাঠিটি ছেঁায়া যায়। কিন্তু এসব ধারণা মোটেও সঠিক নয়— ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করাটাই হল সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি। ইতিবাচক মনোভাবকে গ্রহণ এবং নেতিবাচক মনোভাবকে পরিহার করার মাধ্যমেই সাফল্য অর্জিত হতে পারে। যারা ইতিবাচক মনোভাবকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে গ্রহণ করে এগিয়ে যায়, তারাই সাফল্যের দাবিদার। তাদের এগিয়ে যাবার পথে ব্যর্থতা এসে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেও তারা ব্যর্থতার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধানের সূত্রটি খুঁজে নেয়। ব্যর্থতাকে ভয় পেলে চলবে না, আরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে— যদি মনে হয় সাফল্য পাওয়া অসম্ভবÑ তার পরেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। চেষ্টা চালিয়ে যেতে নিরলস থাকতে হবে, আত্ম—উন্নয়নের জন্য ব্যগ্র থাকতে হবে। ইতিবাচক মনোভাবকে যারা জীবনে গ্রহণ করেছে তারা সবাই নিজেদেরকে জীবনের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেÑ একের পর এক লক্ষ্য অর্জন করেছে। এই বইয়ে বর্ণিত মূল কথাটি হচ্ছে, ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণের মাধ্যমে, সঠিক রুচি নির্মাণ করে, নিজের পছন্দ নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। যা—কিছু চাওয়া হবে— প্রত্যাশিত সমস্ত কিছুই এভাবে অর্জিত হতে পারে। এটাকেই জীবনে সফলতা অর্জনের মূলমন্ত্র, একমাত্র চাবিকাঠি ধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব জীবনে অসন্তোষ বয়ে আনে সাকসেস থ্রো ব্যর্থতা বরণের মূল কারণ নেতিবাচক মনোভাব, তাই নিজের চিন্তাভাবনায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করলে খুব সামান্য, খুবই ক্ষুদ্র অবস্থানে থেকেও জীবনে বৃহত্তর সফলতা আনা সম্ভব।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।