"তোমার নামে সন্ধ্যা নামে" বইয়ের ভূমিকার থেকে নেয়া: উপন্যাসটি লেখার পেছনের ঘটনা মজার। পাক্ষিক অন্যদিন পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য গত ক বছর ধরে প্রতিবারই একটি উপন্যাস লিখি আমি। সেই উপন্যাসই পরবর্তীসময়ে অন্যপ্রকাশ থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এবারও লিখছিলাম। কিন্তু উপন্যাসটি শেষ করা হয় নি। শেষ না করার কারণ মহামারি করােনা। করােনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এবার অন্যদিন ঈদসংখ্যা বের হলাে না। কিন্তু এই খবর যতদিনে জেনেছি, ততদিনে উপন্যাসের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লেখা শেষ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় লিখতে হচ্ছিল একটান। দমবন্ধ পরিস্থিতি। ঠিক সেই মুহুর্তে পত্রিকা বের হচ্ছে না শুনে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। ল্যাপটপ বন্ধ করে মনের আনন্দে অবসর কাটাতে লাগালাম। তারপর দীর্ঘসময় কেটে গেল। মাথা থেকে হারিয়ে গেল এই উপন্যাসও। কিন্তু হঠাৎই একদিন অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলাম বললেন, ‘উপন্যাসের কী খবর? আমি চমকে উঠে বললাম, কোন উপন্যাস ?' তিনি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমি ল্যাপটপে খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, সেই ফাইল আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কী নামে সেভ করেছিলাম তা-ও মনে নেই। বহু তত্ত্ব-তালাশের পর অবশ্য সেই ফাইল খুঁজে পাওয়া গেল। কিন্তু ততদিনে উপন্যাসের অসমাপ্ত অংশের কী গল্প আমি ভেবে রেখেছিলাম, চরিত্রগুলাের পরিণতি কী হবে, সমাপ্তি কী, এসবই আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছি! ফলে লেখাটা আবারও পড়তে হলাে। একবার, দুবার, বহুবার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বহুবার পড়তে গিয়েই নতুন গল্প মাথায় চলে এল। তবে তা আগের লেখা বাদ দিয়ে নয়। বরং সেই আগের লেখার সঙ্গেই যুক্ত হলাে নতুন ঘটনা-প্রবাহ, নতুন সূচনা-সমাপ্তি, সঙ্গে দারুণ কিছু চরিত্রও। কিন্তু এতে কি গল্পের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তর পাঠক দিতে পারবেন না। কারণ, তারা সেই প্রথম অংশ পড়ার সুযােগ পান নি। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, 'তােমার নামে সন্ধ্যা নামে’র শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। -সাদাত হােসাইন
স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।