বিদ‘আত গ্রন্থের এ খণ্ডে জানাযা, কবর, কবর যিয়ারত ও ঈছালে সওয়াব প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ‘আতসমূহের আলোচনা স্থান পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, এসব বিদ‘আত, বিশেষ করে কবর ও যিয়ারতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ‘আতগুলো ইবাদতের অন্যান্য বিদ‘আতের চেয়ে সাধারণত অধিকতর মারাত্মক ও বিপজ্জনক। তন্মধ্যে কোনো কোনোটি র্শিক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। রাসূলুল্লাহ স. র্শিকের এ সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। তিনি কবর যিয়ারতের এমন নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, যাতে লোকজন কবরপূজা ও কবরবাসীদের ব্যাপারে যে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, বর্তমানে অধিকাংশ লোকই কবরকে কেন্দ্র করে এমন সব কাজে জড়িয়ে পড়েছে, যেসব বিষয় থেকে রাসূলুল্লাহ স. নিষেধ করেছেন, উম্মতকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। অবশ্যই কেউ কেউ হয়তো নেক নিয়্যাতেই ঐসব কাজে অংশ গ্রহণ করে থাকে; কিন্তু নিয়্যাত বিশুদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে কাজ এবং কাজের পদ্ধতিটাও যে বিশুদ্ধ হতে হবে- এ সরল কথাটিও তারা সহজে বুঝতে চায় না। আমি এ গ্রন্থে কুর’আন, হাদীস ও প্রথম সারির নির্ভরযোগ্য মুজতাহিদ ইমামগণের মতামতের ভিত্তিতে এ সকল বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও তাওফীকই আমার একমাত্র সম্বল। তিনি আমাকে চিন্তা-গবেষণা করার যে সামান্য সুযোগ দান করেছেন, তা দিয়েই সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে যতটুকু সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি, তা-ই কেবল ‘ইলমের প্রচার ও প্রসারের দায়িত্বানুভূতি থেকে উম্মতের কাছে উপস্থাপন করেছি। মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে এ প্রার্থনা করি, যদি আমার কোনো কথায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, তিনি যেন আমাকে তা ক্ষমা করে দেন এবং সংশোধনের সুযোগ দান করেন। বলাই বাহুল্য, যে কোনো মানবীয় কাজে ভুল থাকা খুবই স্বাভাবিক। আর আমার মতো অতি সাধারণ ব্যক্তির ভুল ব্যাপক হওয়াই সঙ্গত। وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي مِنَ الْخَطَأِ وَالزَّلَلِ. আমি আমার বিজ্ঞ পাঠকগণের নিকট একান্তভাবেই কামনা করবো যে, এ গ্রন্থের কোথাও কোনো ধরনের ভাষাগত ত্রুটি-বিচ্যুতি, তথ্য বিভ্রম কিংবা মতামতের ভুল দেখতে পেলে অনুগ্রহ করে আমাকে অবহিত করবেন। আমি আমার জ্ঞানগত দৈন্য ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে পুরো অবহিত এবং ভুল সংশোধনের জন্য একান্তই আগ্রহী।
ড, আহমদ আলী ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার লােহাগাড়া উপজেলাধীন পশ্চিম কলাউজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনের শুরু থেকে প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে বি.এ. (অনার্স) ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনসহ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর সৌদি আরবের রিয়াদস্থ কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি থেকে আরবি ভাষার শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর উচ্চতর ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম-এর মুহাদ্দিস ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যােগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে নিয়ােজিত আছেন এবং বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা। থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক গবেষণা পত্রিকা ‘ইসলামী আইন ও বিচার'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
তিনি দেশেবিদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণাপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইতােমধ্যে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর 'ষােলটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলাে- খলীফাতু রাসূলিল্লাহ আবু বাকর আস-সিদ্দীক (রা.), বিদ'আত (১ম-৪র্থ খণ্ড), মুসলিম লিপিকলা: উৎপত্তি ও বিকাশ, আধুনিক আরবী কাব্যের ইতিহাস ১ম খণ্ড, ইসলামের শাস্তি আইন, তাযকিয়াতুন নাফস (আত্মশুদ্ধি), ইসমাতুল আম্বিয়া, ইসলামে বাসস্থানের অধিকার ও নিরাপত্তা, ইসলামের দৃষ্টিতে পােশাক, পর্দা ও সাজসজ্জা, সার্বভৌমত্ব: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, গণতন্ত্র ও ইসলাম। তাছাড়া আরবি ভাষা ও সাহিত্য, লিপিকলা, ইসলামের ইতিহাস, জীবনদর্শন, আইন ও সমাজ ব্যবস্থার ওপর তার নানা বিষয়ে লিখিত পঞ্চাশােধিক গবেষণাপ্রবন্ধ দেশবিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।