অবিভক্ত ভারতবর্ষে ক্ষুদ্র অথচ প্রাচীন রাজ্য ত্রিপুরা। আমাদের অতি নিকটবর্তী রাজ্যটি ১৯৪৭-এর দেশভাগে ভারত রাষ্ট্রাধীনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ত্রিপুরার মাণিক্য রাজ-পরিবারের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী রানি কাঞ্চন প্রভা দেবী ভারত সরকারের সঙ্গে দিল্লিতে ভারতভুক্তির আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন করেন ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর। পাঁচশত বছরের অধিক কালব্যাপী স্বাধীন রাজ্যটি মোগল, ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল না। তবে পরবর্তীতে মোগল ও ব্রিটিশদের সীমাহীন আধিপত্য-আগ্রাসনে রাজ্যটি নতজানু নীতি গ্রহণে বাধ্য হয়ে যায়। তাদের আনুগত্য, বশ্যতা স্বীকার করেই মাণিক্য-বংশীয় রাজারা রাজ্য-শাসন নিরাপদ রাখতে বাধ্য হয়েছিল। এতে রাজাদের স্বাধীনতা ছিল সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ। কেবল পার্বত্য ত্রিপুরাতেই তাঁরা স্বাধীন ভাবে রাজত্ব করতে পেরেছিল। অপরদিকে ত্রিপুরার সমতল চাকলা রোশনাবাদ ছিল রাজাদের জমিদারি অঞ্চল। সেখানে তাদের মর্যাদা ছিল রাজারূপে নয়, জমিদার হিসেবে। ভারতভুক্তির পরই ত্রিপুরার মাণিক্য-রাজাদের রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসর ঘটে। গণতান্ত্রিক শাসনাধীনে ত্রিপুরার আর্থ-সামাজিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ভারত ভূণ্ডের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন রাজ্যটির সমষ্টিগত মানুষ আজও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। শিল্প বিনিয়োগ না ঘটায় সামন্তযুগের ন্যায় আজও রাজ্যটি কৃষি অর্থনীতি নির্ভর। উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য হলেও রাজ্যটি আয়তনে এবং জনসংখ্যায় ক্ষুদ্র ও স্বল্প। ভারতের বুর্জোয়ারা মুনাফার ক্ষেত্র সংকীর্ণ বিবেচনায় এরাজ্যে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহী হয়নি। এতে রাজ্যে হিন্দি ভাষার আধিপত্যও গড়ে ওঠেনি। স্থানীয়দের কর্মসংস্থান অত্যন্ত সংকুচিত পরিসরে থাকায় বেকারত্বও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে পশ্চিম বাংলা, আসামের পর সর্বাধিক বাঙালির বাস। বাঙালিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের বাংলা ভাষা পুরোপুরি পূর্ববঙ্গীয়। পশ্চিম বাংলার ন্যায় নয়। মাণিক্য-রাজাদের আমল থেকে অদ্যাবধি রাজ্যের ভাষা বাংলা। আমাদের অতি নিকটবর্তী এই রাজ্য সম্পর্কে আমাদের জানার পরিসর অত্যন্ত সীমিত। গ্রন্থটি পাঠে ত্রিপুরা সম্পর্কে পাঠকেরা অজানা অনেক তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবেন বলেই মনে করি।
জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯৫৮, পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর সলিমপুর, ফৌজদারহাট। জন্ম, বেড়ে ওঠা ঢাকাতে। কৈশোর থেকে প্রত্যক্ষ করা জাতীয়তাবাদী, বাম প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করেছেন, সচেতনভাবে। রাজনীতি সচেতন সক্রিয় সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। নাট্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় মতাদর্শিক রাজনৈতিক চেতনায় সকল মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠার সংস্কৃতির নানাবিধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত। নিয়মিত কলাম, নিবন্ধ, প্রবন্ধ লেখেন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং সাময়িকীতে। সাহিত্য-সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত’র নির্বাহী সম্পাদক। তাঁর সকল কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে মতাদর্শিক অঙ্গীকার এবং সেই অঙ্গীকারেই লেখালেখি।