সূচিপত্র গ্রামের নাম কাঁকনডুবি স’তে সেন্টু ভূতের বাচ্চা সোলায়মান সাইক্লোন এক ডজন একজন আমার সাইন্টিস মামা
ভূমিকা ‘কিশোর উপন্যাস সমগ্র-৬’ বের হলো। কিশোর উপন্যাসের বেলায় একটি সমগ্রে ছয়টি উপন্যাস থাকে, তাই অনুমান করতে পারছি এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে তিন ডজন উপন্যাস লেখা হয়ে গেছে। একটু বেশি লিখে ফেলেছি কিনা বুঝতে পারছি না! তবে আমার পাঠক-পাঠিকারা যেহেতু বাচ্চা-কাচ্চা তাদের চাপটি আন্তরিক, আমি সেটি এড়িয়ে যেতে পারি না। প্রতি বছর একেবারে নিয়ম করে তাদের জন্য লিখতেই হয়। এই সমগ্রের প্রথম উপন্যাসটির নাম গ্রামের নাম কাঁকনডুবি এটি আমার নিজের লেখা খুব প্রিয় একটি উপন্যাস। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিজের চোখে দেখেছি সেটি আমাদের জন্য অনেক বড় একটি সৌভাগ্য। আমাদের নূতন প্রজন্ম তাদের জীবনে অনেক কিছু পাবে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়টিতে বেঁচে থাকার সেই অসাধারণ অভিজ্ঞতাটি কখনো পাবে না। আমি তাই সুযোগ পেলেই বাচ্চা-কাচ্চাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্পটি শোনানোর চেষ্টা করি। কাহিনিটি কাল্পনিক কিন্তু ঘটনাগুলো মোটেও কাল্পনিক নয়, এই উপন্যাসে লেখা ছোট ছোট ঘটনাগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধের নিয়মিত ঘটনা! স’তে সেন্টু বইটি হুইলচেয়ারে থাকা একটি ছেলের গল্প। হুইল চেয়ারে আছে বলেই সে যে খুব অসহায়ভাবে আছে সেটি মোটেও সত্যি নয়সবাইকে নাস্তানাবুদ করে প্রবল প্রতাপে আছে। বইয়ের শেষে আমার নিজের দেখা একটা অভিজ্ঞতা সত্যিকারের চরিত্রের নামসহ লিখেছি, এরকম আর কখনো করেছি বলে মনে পড়ে না। ভূতের বাচ্চা সোলায়মান আসলে প্রথমে টেলিভিশনের নাটক হিসেবে লিখেছিলাম। সবসময়েই মনে হয়েছে কাহিনিটি যথেষ্ট মজার, শুধু টেলিভিশনের নাটক হিসেবে না থেকে বই হিসেবেও থাকলে খারাপ হবে না। তাই সেটাকে উপন্যাসে রূপ দিয়েছিলাম। তবে এই উপন্যাসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে আমার জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। এই উপন্যাস লেখার কারণে একজন জঙ্গী আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল! সবাই মিলে আমাকে বাঁচিয়ে ফেলেছে কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সেই জঙ্গী কিন্তু উপন্যাসটি না পড়েই এত বড় একটা কাজে নেমে পড়েছিল! সাইক্লোন উপন্যাসটি আমার আরেকটি প্রিয় উপন্যাস। যখন আমি খুব ছোট ছিলাম তখন আমাদের পাশের বাসায় একটি ছোট ছেলে আর মেয়েকে আনা হয়েছিল যারা একটি ভয়ংকর সাইক্লোনের সময় গাছের ডালে সারারাত ঝুলে থেকে প্রাণ রক্ষা করেছিল। সেই ভাইবোনের পরিবারের আর কেউ বেঁচে ছিল না। ঘটনাটি আমার মাথায় রয়ে গিয়েছিল, এরকম দুইজন ভাইবোন নিয়ে সবসময়েই কিছু একটা লিখতে চেয়েছিলাম! সাইক্লোন বইয়ের কাহিনিতে আরো অনেক কিছু আছে, কিন্তু মূল কাহিনিটি শুরু হয়েছে এরকম দুইজন ভাইবোন দিয়ে। এক ডজন একজন এবং আমার সাইন্টিস মামা এই দুটি উপন্যাস আমার হালকা ঢংয়ে লেখা উপন্যাস। কিন্তু বিষয় যে খুব হালকা তা নয় বিশেষ করে এক ডজন একজন যথেষ্ট সিরিয়াস উপন্যাস। আমার কমবয়সী পাঠকেরা এই উপন্যাসগুলো সাদরে গ্রহণ করেছে। এই সমগ্রে দুই মলাটের মাঝখানে উপন্যাসগুলো একত্র করতে পেরে এখন আমার নিজেরও খুব ভালো লাগছে!
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।