পূর্ণিমা রাতে নিজের সাথে কথা বলছে মাধুরিমাঃ ‘কে তুমি একলা মেয়ে? এতো রাতে বারান্দায়? বসে আছো কার প্রতীক্ষায়?’ ‘আমি রিমা, মাধুরিমা। হারিয়ে ফেলেছি থৈ। কিছু প্রশ্ন আছে। উত্তর দেবে সই?’ ‘কি জানতে চাও? প্রশ্ন করো’ ‘আমি কি ভালোবাসি শিবলিকে?’ ‘হ্যা, এখনো তোমার ইচ্ছে হচ্ছে শিবলির হাতে মাথা রেখে ঘুমাতে’ ‘ঐ হাত ধাক্কা দিয়েছে আমায়’ ‘একদিন থাপ্পড়ও দিবে’ ‘আমি মেয়ে মানুষ বলে?’ ‘না। সমাজের চাপিয়ে দেয়া মেয়ে মানুষ শব্দটা মেনে নিচ্ছ বলে’ ‘ঐ শব্দ দুটো আমি মানি না। ঘৃণা করি’ ‘ঘৃণা করে লাভ নেই। পৃথিবীকে সেটা জানাতে হবে’ ‘কি করে জানাব?’ ‘প্রথমে শিবলিকে জানাও। প্রতিবাদ করো’ ‘বলেছি তো। মানে না, ক্ষেপে যায় ও’ ‘শক্ত করে ঝাঁকি দাও। শিক্ষা হবে ওর’ ‘ওকে যে ভালোবাসি আমি। কী করে দুঃখ দেব?’ ‘তুমি মাছ খেতে ভালবাস। মাছের আঁশটে কেন ফেলে দাও?’ ‘আঁশটেতে দুর্গন্ধ লাগে’ ‘সামাজিক দুর্গন্ধ লেগে আছে শিবলির গায়। তুলে ফেল আঁশটে’ ‘কিভাবে?’ ‘ওকে ছেড়ে যাও। বিরহের যন্ত্রণা দাও। শিক্ষা হবে তবে’ ‘আমাকে যদি ভুলে যায় সে?’ ‘যাবে না। ও ভালোবাসে তোমাকে’ ‘কি করে বুঝব, ও সত্যিই ভালোবাসে?’ ‘তোমার কান্না সইতে পারে না ও। বিরহ কিছুতেই নিতে পারবে না সে’ ‘যদি আর না ডাকে আমায়?’ ‘হবে না তা। হলেও ক্ষতি নেই’ ‘ক্ষতি নেই? বলছ কি তুমি?’ ‘একলা চলবে তুমি। অনেকেই চলে’ ‘সে তো গল্পে পড়েছি। বাস্তবে তা কি হয়?’ ‘গল্প চলে আগে। পিছে পিছে জীবন’ ‘মানে?’ ‘রবীন্দ্রনাথের গান করো তুমি। তার গল্পও পড়েছ। এক’শ বছর আগের লেখা। আমাদের জীবন এখনো সেখানে যায় নি’ ‘ভয় করছে আমার’ ‘ভয় নেই। তুমি ভিতু নও। মাঝ রাতে একলা বারান্দায় তুমি বসে আছ। ভয় পাচ্ছ না তুমি’ ‘বারান্দায় আছে চাঁদের আলো’ ‘জীবনেও আছে অনেক আলো। আছে তোমার শিক্ষা, আছে বাবা, আছে রবীন্দ্রনাথ’ ‘সে তো সবারই থাকে’ ‘এই চাঁদের আলোটাও সবার। কিন্তু সবাই ঘুমিয়ে আছে। তুমি প্রশ্ন করছ আলোর কাছে’ ‘আলোর কাছে? তুমি আলো?’ ‘হ্যা, তুমিও আলো। তুমি আলোর মাধুরিমা। ছড়িয়ে পড়। ভয় নেই’