আজ মেঘলা আকাশ। মেঘে মেঘে সারা আকাশ ছেয়ে আছে। আকাশ জুড়ে বৃষ্টিময় মেঘ , মেঘেদের মিছিল গুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখলেই শ্রাবণীর মন উতলা হয়ে যায়। মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে একেবারে নীচ দিয়ে। ওদের মাথার উপরে মেঘ। রিক্সায় বসে শ্রাবণীর ইচ্ছে হলো , মেঘগুলোকে যদি ছুঁয়ে দিতে পারতাম। মেঘ ছোঁবার ইচ্ছা ওর বহুদিনের। শ্রাবণীর মনে হলো, মেঘ গুলো হয়তো কোন একদিন আরো নীচে চলে আসবে, একে বারে হাতের কাছা কাছি , ও হাত বাড়িয়ে মেঘ গুলোকে ছুঁয়ে দিতে পারবে। ওর শাড়ির আঁচল ভিজে যাবে মেঘের পানিতে। অদ্ভুত স্বপ্ন ! স্বনের তো কোন সংবিধান নেই। একান্তই নিজের ব্যাপার। স্বপ্ন দেখতে দোষ কি ! ভাবতে ভাবতেই ও স্বপ্ন রাজ্যে হারিয়ে গেলো। শ্রাবণীর শাড়ির আঁচল ভিজে যাচ্ছে মেঘের পানিতে। সারা শরীরে প্রশান্তির পরশ ভুলে যাচ্ছে। শ্রাবণী ভেসে বেড়াচ্ছে শূন্যে, মেঘেদের দেশে। বাবার কথায় স্বপ্ন ভাংলো শ্রাবণীর। বাবা পাশেই বসে আছে। ওরা একটা হূড তোলা রিক্সায় বসে আছে। তারা শহরে যাচ্ছে বাবাকে ডাক্তার দেখাতে। বাবা মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি বিড় বিড় করে বললেন- ‘ বিকেল দিকে বৃষ্টি হতে পারে।’ ‘ বিকেল মানে সন্ধ্যায় ? ’ ‘ হুম। ’ বাবাকে আজ অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে। নতুন পাঞ্জাবী পড়েছে। ইস্ত্রি করা পায়জামার ভাজগুলো ভাঙ্গে নাই। তাকে আজ খুব পরিপাটি দেখা যাচ্ছে। বাবা অনেক দিন বাড়ির বাহির হয় নাই। তার মধো একটা পিকনিক পিকনিক ভাব চলে এসেছে। তাকে আজ প্রফুল্য দেখাচ্ছে। তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে , মনে হয় সে অনেক দিন আকাশ দেখে নাই। মেঘেদের মিছিল গুলো আরো নীচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে থেকে তিনি আবারো বললেন- ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি’। শ্রাবণী বললো -‘ ডাক্তারের কাছে ’। ‘ কোন লাব নাই , রোগের বীজ বপন হয়ে গেছে। সেই বীজ থেকে গাছ হবে। আস্তে আস্তে গাছ বড় হতে থাকবে , মস্ত বড় গাছ হবে। সেই গাছের ডালপালা গুলো হচ্ছে অক্টোপাসের চেয়েও ভয়াবহ। এই সব ওষুধ- ফসুদে শুধু গাছের দু একটা ডাল-পালা কাটা পড়বে। একটা ডাল কাটা হলে সেখানে আবার দু টা ডাল গজাবে । রোগের মূল শেকড় কোন দিনই মরবেনা , বুঝছস ? ’ বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন আশরাফ আলী সাহেব। তার হাসির কারনে রিক্সা দুলতে থাকলো। রিক্সাওয়ালা পেছনে ফিরে তাকালো , কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারো রিক্সা চলতে লাগলো সে। আশরাফ আলী সাহেব হাসি থামালেন না।