সময়টা আশ্বিন মাসের শেষ দিকের কোনাে সকাল। আব্বা দশ পয়সায় এক বাটি চিনাবাদাম কিনে দিয়ে বললেন, তােরা তিনজন এহন অইতে প্রতিদিনই ধান খ্যাতের পাখি খ্যাদাবি। বাড়ির পিছের বাডে, পাট খ্যাতের শেষে, যে আমন ধান আছে, ওহােনে পাখি পড়তে শুরু করছে। সব ধান খাইয়া হালাইতেছে। কী সুন্দর ধান অইছে! মুই পাট খ্যাতের শেষে, ধান খ্যাতের লগে উঁচা সুন্দর একটা টোং বানাইয়া রাখছি। তােরা তিনজন ওহােনে বইয়া পাহারা দিবি, আর পাখি খ্যাদাবিযতদিন ধান না পাহে (পাকে)। এইজন্য প্রতিদিন তােরা কিছু না কিছু পাবি। বাদাম নইলে লজেন-চানাচুর, ঠিক আছে? শােনার সাথে সাথেই মনের মধ্যে কী রকম একটা মােচড় দিয়ে উঠল। মুহূর্তেই হারিয়ে গেলাম স্বপ্ন-রাজ্যে। দেখতে থাকি পাটখেত, ধানখেত তারই মাঝে নির্মিত বাঁশের টং। খেত ভরা ধান, কী সুন্দর নীল আকাশ! মাঝে সাদা মেঘ ভেসে চলে যায়। দলে দলে উড়ে যায়, উড়ে আসে পাখি। তার মাঝে আমরা তিন ভাই-বােন টং পেতে বসে আছি। বাহ কী চমৎকার!!! ভাবতেই শিহরন জাগে মনে। আব্বা হয়ত জানেন না, কতটা খুশি হয়েছি এ কাজটি পেয়ে এতদিনে মনের মতাে কোনাে কাজের কথা বললেন। এটা আমার কাছে শুধু কোনাে কাজ কিংবা দায়িত্ব বলে মনে হয়নি, বরং মনে হয়েছে পছন্দনীয় সেরা কোনাে খেলা হিসেবে, মজা হিসেবে এই প্রথম, আমার পছন্দের কোনাে বিষয়কে আব্বা অজান্তে হুকম কিংবা সম্মতি দিলেন। তাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পেরে তিনি যেমন স্বস্তিতে আছেন, আমিও কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে বিভাের হচ্ছি প্রতি মুহূর্তে। আব্বা বললেন, চল— তােগাে দ্যাহাইয়া নিয়া আহি বলে, উঠোন থেকে বাড়ির পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। বাদামের বাটি হাতে নিয়ে আমরাও তার পিছে পিছে হাঁটতে থাকি। উঠোন পেরিয়ে পশ্চিম প্রান্তে চাচার ঘরের পাশ দিয়ে নেমে পুকুর পাড়ের বেষ্টিত গাছপালার ভিতর দিয়ে সরু পথ ধরে বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে, সােজা নেমে যাই খেতের কিনারে। সামনেই পাটখেতের শুরু এবং পানির শুরুটাও এখান থেকেই। যদিও এখানে কমই পানি দেখা যায়। পায়ের গােড়ালি অবধি হবে। কী টলটলে ফর্সা পানি! আব্বা বললেন, মাের পিছে পিছে আয়। দেখলাম, আব্বা দুই জমির আইল দিয়ে, পাটখেতের পাশ ঘেঁষে ক্রমশ পশ্চিমে এগুচ্ছেন।
পরান জহির (বাদল) এর জন্ম মাদারিপুরের কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।বাবা মােঃ আব্দুর রাজ্জাক ফকির, মা মােসাঃ তাবারুণ নেসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল্য চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে পড়ালেখা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন।ছােটবেলা থেকেই শিল্প-সাহিত্যের প্রতি প্রবল ঝোঁক। স্কুল জীবন থেকেই দু'এক কলম লিখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে একাধারে অজস্র কবিতা রচনার পাশাপাশি গান রচনায় মনােযােগি হন। অসংখ্য কবিতা, গান লিখলেও বই আকারে তা প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি। বিস্তৃত শৈশবের নানা ঘটনা নিয়ে তার সম্প্রতি লেখা ২৬টি গল্পের সমন্বয়ে বই " মায়াজাল " প্রকাশিত হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২১-এ এসবের পাশাপাশি, অভিনয়েও রয়েছে তার সমান আগ্রহ। এ যাবত অসংখ্য টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন। রয়েছে সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও। মঞ্চ নাটক দিয়েই অভিনয় জীবনের শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি চারণ নাট্য গােষ্ঠী “ র সাথে যুক্ত ছিলেন। সাময়িক বিরতির পর ২০০৭ সালে ফের যুক্ত হন দেশের বৃহৎ নাট্যদল " নাগরিক নাট্যাঙ্গন " -এ সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় পেয়েছেন নাট্যাগুরু ড. ইনামুল হক ও লাকী ইনাম কে। মনের অন্তর্নিহিত অভিপ্রায়গুলােকে তারা ডানা মেলতে সাহায্য করেছেন নানাভাবে।। জহিরুল ইসলাম (বাদল) থেকে পরান জহির হয়ে ওঠার পেছনে যে মানুষটি জড়িত তিনি চিত্রনাট্যকার, নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা – অনিমেষ আইচ। তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। চিত্রনাট্যকার, নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেদোয়ান রনি'র প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা।